শায়েস্তাগঞ্জে সু-পেয় পানির সংকট

0
61

এমএইছ চৌধুরী, জুনাইদ। শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ থেকে :: শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা সহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় সু-পেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসূমে ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর অপেক্ষাকৃত নীচে নামতে থাকায় প্রতি বছরই এ সংকটে পড়তে হয় উক্ত এলাকার লোকজনের। মূলত এই সংকটের সূত্রপাত হয় আজ থেকে ৮-১০ বছর পূর্ব হতে। ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর ক্রমশঃ নিম্নগামী হওয়াতে এ সংকট ধীরেধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে উল্লেখিত এলাকায় সাধারণ টিউবওয়েলের পানির প্রবাহ হ্রাস পেতে থাকে। ফেব্রুয়ারী মার্চ মাসে উক্ত অগভীর নলকূপগুলোর পানির প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উক্ত এলাকার বাসিন্দারা সু-পেয় পানির অভাব অনুভব করতে থাকেন। এলাকাব্যাপী দেখা দেয় পানযোগ্য পানির সংকট। কেউ কেউ ১০-১২ হাজার টাকা ব্যয়ে টিউবওয়েলের সহিত সিলিন্ডার (হাতল লাগানো এক প্রকার মোটা প্লাস্টিকের পাইপ) সংযোগের মাধ্যমে কিছু পানির যোগান পেলেও তা বেশী দিন চলে না।

এ সময়ে ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর নিম্নগামী হওয়ার অন্যতম কারন হচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ধানসহ অন্যান্য ফসলী জমিতে পানি সরবরাহ করা। এ মৌসূমের রবি শষ্যসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করতে প্রচুর পরিমানে পানি সেচের প্রয়োজন হয়। এই মৌসূমে নদী নালা, খাল, বিল, পুকুরসহ অন্যান্য সমস্ত জলাধারই পানিশুণ্য হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়েই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

পানির স্বল্পতা দূরীকরণে এলাকার সচ্ছল ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাড়ির আঙ্গিনায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ডিপ-টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। ওই ডিপ-টিউবওয়েলগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়াতে অনেকেই সেখানে যেতে কুন্ঠা বোধ করেন। তার পরও অনেকটা বাধ্য হয়েই যেতে হয় পানযোগ্য পানির প্রয়োজন মেটাতে। এসময় গ্রাম্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠা চা দেকানগুলোতে লোকজনদের চায়ের আড্ডায় বিভিন্ন আলোচ্য সূচীর মধ্যে পানি সংকটের বিষয় হয়ে উঠে মূখ্য ও অন্যতম। অন্যদিকে গ্রাম্য কুলবধুদের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে কোন বাড়ির টিউবওয়েলে এখনও পানির প্রবাহ অব্যহত আছে। ওই মহিলারা যখন কলসী নিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করতে আরেক বাড়ি যায়, তখন ক্ষনকালের জন্য দৃষ্টিগোচর হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হারিয়ে যাওয়া সেই দৃশ্য, কলসী কাকে কুলবধুর জল আনতে যাওয়া।

এ বিষয়ে পৌরসভাস্থ মহলুল সুনামর বাসিন্দা তাফহিম চৌধুরী জানান, উনার বাড়ির অগভীর নলকূপটির পনির প্রবাহ ইতোমধ্যে হ্রাস পেয়েছে, কখন বন্ধ হয়ে যায় এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

পানি সংকটে ভোক্তভোগী দাউদনগর গ্রামের জনৈক বাসিন্দা তানবীর চৌধুরী জানান, উনার বাড়িতে ২৮০ ফুট গভীরতা সম্পন্ন টিউবওয়েলটির পানির প্রবাহ ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি মোটর সংযোগের মাধ্যমে আপাতত পানির অভাব পূরণ করতে পেরেছেন। তবে এই অবস্থা কতদিন অব্যহত থাকবে তা নিয়ে দুঃচিন্তায় আছেন। তিনি আরও বলেন মার্চ এপ্রিলের মধ্যে যদি বৃষ্টিপাত না হয় তা হলে উনার সমস্থ প্রচেষ্টাই ব্যার্থ হয়ে যাবে।

একই গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ নাঈম জানান, উনার অগভীর নলকূপটির পনির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তিনি পাশের বাড়ির গভীর নলকূপ থেকে পাইপ লাগিয়ে পানি এনে উনার পানি সংকট থেকে আপাততঃ রক্ষা পেয়েছেন।

বাগুনিপাড়া গ্রামের আলেয়া বেগম বলেন, উনাদের বাড়ির টিউবওয়েলে এখন আর পানি দেয়না তাই অন্য বাড়ি থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। বাড়িতে ছোট্ট একটি পুকুরও আছে এতে দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন, পুকুরের পানিও ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। এমনিতেই অত্র অঞ্চলে পুকুরের সংখ্যা অপ্রতুল। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নগামীতার সাথে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে পুকুরের পানিও। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে পানি সরবরাহের মাধ্যমে পৌরবাসীর পানির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে একসময় হয়তো পৌরবাসী বর্তমান সংকট থেকে নিস্তার পাবেন। তবে পৌরএলাকার বাহিরের জনসাধারণের এ সমস্যা থেকেই যাবে। উক্ত এলাকায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পর্যাপ্ত সংখ্যক গভীরনলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে শায়েস্তাগঞ্জের এই পানি সংকট দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন অত্র এলাকার সচেতন মহল।

কোন মন্তব্য নেই