নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা অনেক অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঝুঁকছে লাভজনক টার্কি মুরগী পালনে। এটি ঝামেলাহীন ভাবে দেশি মুরগির মতো পালন করা যায়। টার্কি বয়লার মুরগির চেয়ে দ্রুত সময়ে বাড়ে।
জানা গেছে, ১৭০০ সালে যুক্তরাজ্যে ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে টার্কি মুরগির জাত উৎপাদন করা হয়। উত্তর আমেরিকা টার্কি মুরগির উৎপত্তিস্থল। ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে টার্কি মুরগি পালন করা হয়। অনেকটা খাসির মাংসের মতোই এ মুরগির মাংসের স্বাদ। এ মাংসে অধিক পরিমাণ প্রোটিন ও কম পরিমাণ চর্বি রয়েছে। সুস্বাদু এই মুরগির রোগ বালাইও তেমন হয় না।
ডোয়াইবাড়ী গ্রামের সফিকুল ইসলাম জানান, আমি একজন প্রবাসী আমি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়াতে ছিলাম।গত একবছর আগে একেবারে দেশে চলে আসি। দেশে এসে ভাবছিলাম কি করাযায় মানুষে কাছে টার্কি ফার্মের গল্পশুনে মনস্থির করলাম টার্কি মুরগী ফার্ম করবো।মূলত এই ব্যবসায় আসার পেছনে আমার শখ সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে। আর যখন শুনতে পারলাম টার্কি পালনে অন্যান্য হাস মুরগি পালনের মতো কোনো ঝামেলা নেই তখন এই ব্যবসায় করার প্রতি আমার আগ্রহ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। আর এই ব্যবসায় অনেক মুনাফা পাওয়া যায়।তারপর ঘর তৈরীর কাজ শুরু করলাম। ঘরের কাজ শেষে বাচ্চা সংগ্রহ করে টার্কি ফার্ম গড়েতুলেছি।আমার ফার্মের টার্কির বয়স ৬ মাস।কিছুদিন আগে বেশকিছু মুরগী বিক্রয় করেছি মের্দী মুরগীর ওজন ৪ কেজী এবং মর্দা মুগীর ওজন ৮ কেজী হয়েছে।একটি মর্দা মুরগী এবং একটি মের্দীর মুরগীর জোরা ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রয় হয়েছে।এখন টার্কি ডিম দিতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারে ডিমের হালী ৪শত থেকে ৫ শত টাকা বিক্রয় হচ্ছে। আমার পরিকল্পনা আছে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর।
টার্কি ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী ভাংনাহাটি গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, আমি ৫ বছর যাবত লেয়ার মুরগী পালন করে আসছি ডিমের বাজার কম হওয়াতে লাভবান হতে পারছিনা। বর্তামানে দেশে এবং দেশের বাহিরে টার্কি মুরগীর ডিম এবং মাংশের চাহিদা থাকায় আমি টার্কি মুরগী পালন করছি এবং লাভবান হয়েছি।সবকার যদি টার্কি খামারিদের সহজ শর্তে ঋৃনের ব্যবস্থা করে তাহলে মুরগীর মাংশ বিদেশে রফতানিকরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকরা সম্ভব।
টার্কি পালনের সুবিধার কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, এটি ঝামেলাহীন ভাবে দেশি মুরগির মতো পালন করা যায়। টার্কি বয়লার মুরগির চেয়ে দ্রুত বাড়ে। বাচ্চা অবস্তায় ১ম তিন মাস দানাদার খাবার খায় পরের ৩ মাস সবজি জাতিয় খাবার ও ঘাস লতা পাতা খেয়েই টার্কি বড় হয়।
শ্রীপুর উত্তরপাড়া এলাকার মুনসুর বলেন, আমি সবসময় বাড়িতে হাস,মুরগী, কবুতর পালন করছি পাশা-পাশি কোয়েল পাখি পালন করেছি। ডিম এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রয় করছি।বর্তমানে বাংলাদেশে টার্কির বাচ্চা,ডিম,মাংশ ব্যাপক চাহিদা থাকায় আমি টার্কি পালন করছি।
তিনি আরো জানান, একটি টার্কি মুরগি একটানা ২২টি পর্যন্ত ডিম দেয়।তিনি নিজে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করেছেন হ্যাচারি মেশিন। এ মেশিনে ডিম রাখার ২৮ দিন পর বাচ্চা ফুটে। দানাদার খাদ্য ছাড়াও কলমির শাক, বাঁধাকপি ও সবজি জাতীয় খাবার খায় টার্কি মুরগি। চার মাস পর থেকে খাওয়ার উপযোগী হয় এসব মুরগি। ছয় মাস বয়সের মুরগি ৬ থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত হয়। একটি টার্কি মুরগির ওজন ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়। প্রতিকেজি মুরগি ৭ থেকে ৮ শত টাকা কেজি বিক্রয় হয়।
তিনি বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি দুই একটি কথা বলতে চাই। আপনারা অল্প কিছু টাকা বিনিয়োগ করে এই টার্কি ব্যবসা গড়ে তুলুন। কারণ এইগুলোর রোগ, খাদ্য, বাসস্থানের জন্য বেশি অর্থ খাটানোর প্রয়োজন পড়ে না। অল্প কিছু জায়গায় টার্কি খামার দিলে আপনি বছর শেষে কয়েকগুণ বেশি লাভ করতে পারবেন।’