বিশেষ প্রতিনিধি, শ্রীপুর গাজীপুর।
গাজীপুর শ্রীপুরে অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মাটিকাটার ধুম ধ্বংসের মুখে সরকারি বন ভূমি!
একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার সংকল্পে এদেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন করেছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধে। কিন্তু উচ্চাভিলাষী কিছু মানুষের কারণে প্রতি মূহুর্তেই বিপদজনক হচ্ছে রক্তে অর্জিত এই ভূখন্ডটি।
অতিরিক্ত শীত বা গরম জলবায়ু পরিবর্তনের এক ধরনের লক্ষন। বর্তমানে প্রচন্ড গরমে নাজেহাল জনজীবন। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে তাপমাত্রা। যার অন্যতম কারণ বৃক্ষ নিধন ও বন ধ্বংস। ফলে শীত ও গরম এই দুই ঋতে পরিনত হয়েছে ছয় ঋতুর বাংলাদেশ।
সবুজে ঘেরা লাল সবুজের বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করতে এদেশের মানুষদের মোকাবিলা করতে হয়েছিলো শত্রুবাহিনীদের বিরোদ্ধে; আর বর্তমান সময়ে মোকাবিলা করতে হচ্ছে আগুনে পুড়া পরিবেশের বিরোদ্ধে! যদিও দগ্ধ পরিবেশের চেয়ে শত্রুর মোকাবিলা করা ঢেড় সহজ!
৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রিয় মাতৃভূমিকে ৯ মাসে শত্রুমুক্ত করতে পারলে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সম্ভব হয়নি ঘরের শত্রু নিধন করার! অর্থাৎ বসবাসযোগ্য পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে দরকার দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে আছে ১৭ ভাগ। কিন্তু প্রকৃত চিত্র আরো ভয়ংকর। বাস্তবে বনভূমি আছে মাত্র ৯ ভাগ!
জলবায়ু পরিবর্তনের কারিগড়রা শুধু বনায়ন ধ্বংসেই সন্তুষ্ট নয়। প্রচন্ড অনাহারি বন খেকুরা গিলে খাচ্ছে ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তে অর্জিত প্রিয় মাতৃভূমির মাটি! সরেজমিনে শ্রীপুর রেঞ্জের শ্রীপুর সদর বিটের অন্তর্গত ৭নং গোসিংগা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দক্ষিন গাজিয়ারণ গ্রামের ৯৬ নং দাগের সংরক্ষিত বনের বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে মাটি ব্যবসায়িরা মাটি কেটে নিলেও রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকায় রয়েছে শ্রীপুর সদর বিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বন রক্ষীরা!
ফরেস্টার বজলুর রশিদের দায়িত্বকালীন সময়ে তার দায়িত্বপূর্ন এলাকার বিশাল অংশের মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, রাতের আঁধারে সরকারি বনভূমি থেকে কে বা কারা মাটি কেটেছে সেটা আমার জানা নেই,তবে যারাই বনের জমি থেকে মাটি কেটেছে তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করে বলেন অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীদের সাথে গোপন যোগাযোগ রয়েছে বিট কর্মকর্তা মীর বজলুল রহমানের,তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
আশ্চর্যের বিষয় হল দীর্ঘদিন ধরে বনের জমি থেকে মাটি কাটা হলেও বন কর্মকর্তারা তাদের নাম ঠিকানা কিছুই জানেন না, অথচ একজন সংবাদ কর্মী তার এখানে মাটি কাটার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে গেলে সংবাদকর্মীর সাথে পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও তার নাম ঠিকানা, বাবার নামসহ তিনি সকল তথ্য সংরক্ষণ করেন বিট কর্মকর্তা! এমনকি সংবাদ প্রকাশ না করতেও রিকোয়েস্ট করেন তিনি।
এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রিয় সম্পদ আত্মসাৎ হলেও নিরব স্থানীয় বন বিভাগ। সবশেষ একটি মামলা দিয়ে সম্পূর্ন করা হয় সরকারি দায়িত্ব!। এছাড়া স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের নামেও দেওয়া হয় অজ্ঞাত বনের মামলা।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, সাবেক এমপি মরহুম রহমত আলীর পুত্র জামিল হাসান দূর্জয় সাহেবের নাম ভাঙ্গিয়ে ভূমিদস্যুরা খুঁটা খাড়তো। আর বর্তমান এমপি মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ সাহেবে নাম ভাঙ্গিয়ে নেতারা মাটিই বিক্রি করে দিচ্ছে! অর্থাৎ দিন দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে।
এসব বিষয়ে ৭ নং গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ইউপি মেম্বার সুমন মিয়া বলেন, আমার ওয়ার্ডের সরকারি বনভূমি থেকে কে মাটি কাটছে বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে এই এলাকায় বন কর্মকর্তার অনুমতি না নিয়ে মাটি কাটবে এরকম দুঃসাহস কার? বিষয়টি বন কর্মকর্তাকে আপনি অবহিত করুন, অবশ্যই তিনি আমার চাইতে ভালো বলতে পারবেন।
গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের, চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান (শাহিন)মোড়ল বলেন, বনের জমি থেকে কারা মাটি কাটছে এ বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে যারা এই সুন্দর প্রাকৃতিক বনভূমি ধ্বংস করে মাটি কাটছে এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত। যেহেতু সরকারি জমি রক্ষরাবেক্ষণের জন্য বন প্রহরী রয়েছে, আর তাদের চোখের সামনে কিভাবে বন থেকে মাটি নিয়ে যায়, বিষয়টি খুবই রহস্যজনক! তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলার কারণেই বনের ভেতর থেকে ভূমিদস্যরা মাটি কেটে নিতে সাহস পায়, আমি সরকারি বন কর্মকর্তাদেরকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলব যারা বনের জমি থেকে মাটি কেটেছে এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।