শ্রীপুরে আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতির শুভ উদ্বোধন

0
318

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর রেল স্টেশনে আন্ত:নগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের বৈধ ভাবে ৭৪৫ আপ, ৭৪৬ ডাউন যাত্রা বিরতির শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।

শুক্রবার ১০ জানুয়ারী বিকেল ৪ টায় শ্রীপুর রেল স্টেশনে যমুনা আন্তঃনগর ট্রেনের বৈধ ভাবে যাত্রা বিরতির উদ্বোধন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আফতাব উদ্দিন আহমেদের সভাপত্বিতে ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নুরে আলম মোল্লার সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, শ্রীপুর পৌর মেয়র মো: আনিছুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শাফিউদ্দিন মোড়ল, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মো: ওয়াজ উদ্দিন,গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীয়া বিষয়ক সাম্পাদক হুমায়ূন কবির হিমু, পৌর আওমীলীগের সভাপতি মো: সিরাজুল ইসলাম।

এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শ্রীপুর বাজার ব্যবসায়ী নিরাপত্তা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন খাঁন রতন, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সোহাগ, যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান, প্রোফেসর আবুল কালাম আজাদ, মো: সিদ্দিক মিয়া, এ্যাড. কাজী আলম, শ্রীপুর প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক সাংবাদিক জুনায়েদ আকন্দ, শ্রীপুর ট্যুরিজম বাইকার্স যুব উন্নয়ন সংঘের সভাপতি খন্দকার মাসুদ রানা, সাধারন সাম্পাদক সাংবাদিক আরিফ মন্ডল, যুগ্ন সম্পাদক আলমগীর শেখ, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ সুজন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিঃ মোঃ আসাদুজ্জামান বিপু, অভিনেতা মোশারফ গাজী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পর্যটক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এর আগে শ্রীপুর (এসআরটি) চীফ কমান্ডেট তুহিন আহমেদের নেত্বত্বে একদল স্বেচ্ছাসেবী রাত ভর পরিশ্রমে ফুল ও বেলুনের সমন্বয়ে সাজে সজ্জিত হয় শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন।

ভোর হওয়ার আগেই উৎসুক জনতা চলে আসে রেলওয়ে স্টেশনে। অপেক্ষার কাঙ্ক্ষিত সেই যমুনা ট্রেনের জন্য। জামালপুরের সরিষাবাড়ি থেকে ছেড়ে আসা আন্ত:নগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৫:৪৮ মিনিটে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল পথের শ্রীপুর রেল স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে।

ভোর সাড়ে ৫ টায় স্টেশন মাষ্টার মো: সাইদুর রহমানের কাছ থেকে প্রথম টিকিট কেটে ট্রেনের টিকিটের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আফতাব উদ্দিন আহমেদ।

পরে যাত্রিদের জন্য কাউন্টার খুলে দেওয়া হলে টিকিটের জন্য কাউন্টারে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। পরুষ ও মহিলা আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেন।

প্রথম এই স্টেশন থেকে যমুনা ট্রেনের টিকিট হাতে পেয়ে সাধারন মানুষের মাঝে আনন্দ উল্লাস দেখা গেছে। এসময় ব্যবসায়ী তপন বনিকের নেতৃত্বে ট্রেনের ইঞ্জিন ফুলদিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয় এবং লাল গোলাপের শুভেচ্ছা ও নাস্তার প্যাকেট দেওয়া হয়।

শ্রীপুর বাজারের ব্যবসায়ী তপন বনিক জানান, আমরা শ্রীপুরে সর্বস্তরের জনগনকে সাথে নিয়ে যমুনা ট্রেনটির জন্য আন্দোলন করে এসে ছিলাম। দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর পরে হলেও আমরা বৈধ ভাবে ট্রেনের যাত্রাবিরতি পেয়ে আনন্দিত। ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের আপ-ডাউন যাত্রাবিরতি কার্যকর করায় আন্তরিক ভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় রেলমন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম সুজন,সাবেক এমপি জনাব আলহাজ্ব এ্যাডভোকেট রহমত আলী, গাজীপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জনাব, ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে । এ ছাড়াও শ্রীপুর স্টেশনে কর্মরত সকল স্টেশন মাস্টারকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

শ্রীপুর ট্যুরিজম বাইকার্সের সভাপতি খন্দকার মাসুদ রানা বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শ্রীপুরে বেড়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠান। তার সাথে বেড়েছে বাহিরের ভাস্যমান মানুষের চলাচল। শ্রীপুর থেকে ঢাকা বাসে যাতায়াতে অনেক সময় ৬ ঘন্টা লেগে যায়। শ্রীপুর থেকে ঢাকাগামী অনেক ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবি নিজের কর্মঘন্টা বাঁচাতে ও ট্রাফিক জ্যাম থেকে বাঁচতে প্রতিদিন ট্রেনে যাতায়াত করে। প্রথম থেকেই আমরা যমুনা ট্রেন যাত্রাবিরতি আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগনের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে ছিলাম। জনগনের চাহিদা বিবেচনায় রেখে সরকার শ্রীপুর স্টেশনে যমুনা আন্তঃনগর ট্রেনের বৈধ যাত্রা বিরতি কার্যকর করেছে।এতে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও রেল মন্ত্রলায়ে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানাই।

শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার হারুন অর রশিদ জানান, প্রথম দিনে যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। সকালে ৩১৬ টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। শ্রীপুর থেকে থেকে জয়দেপুর টিকিট মূল্য ৪৫ টাকা, বিমান বন্দর ও কমলাপুর ৬০ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এখানে টিকিট বিক্রয় ভালো হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

উল্লেখ্য, শিল্পাঞ্চল খ্যাত শ্রীপুরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার শ্রমজীবি, পেশাজীবি মানুষ প্রতিদিন ট্রেনে আসা যাওয়া করে। শ্রীপুর রেলষ্টেশন থেকে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে তথা জয়দেবপুর, ঢাকা, বিমানবন্দর, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। বিশেষ করে শ্রীপুর থেকে ঢাকায় অনেক চাকুরীজীবি ট্রাফিক জ্যাম এড়ানোর জন্য প্রতিদিন ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন। কোন আন্তঃনগর ট্রেন এই স্টেশনে যাত্রাবিরতি না থাকায় এই এলাকার সর্বস্তরের জনগন একত্রিত হয়ে লাল পতাকা দেখিয়ে ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ইং আপ-ডাউনে দু’মিনিট অননুমোদনহীন ভাবে ট্রেনটি যাত্রাবিরতি করিয়ে আসছিল। শ্রীপুর থেকে টিকিট না থাকায় ট্রেনে উঠে যাত্রি সাধারনকে প্রায় সময় জরিমানাসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।তৎকালীন এমপি এ ব্যাপারে রেলওয়ে মন্ত্রনালয়ে ডিও লেটার প্রদান করেন। তারপরও শ্রীপুরবাসী শান্তিপূর্ণ ভাবে মানববন্ধন ও বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছিল। এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরসহ আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনে যমুনা ট্রেনের দু’মিনিটের যাত্রাবিরতির জন্য সুপারিশ করেন।

এ নিয়ে সাবেক এমপি ও বর্তমান আওমীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব এ্যাডভোকেট মো: রহমত আলী ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর রবিবার অনুষ্ঠিতব্য সংসদের বৈঠকে মৌখিক উত্তরদানের জন্য পশ্ন ও উত্তর পর্বে ৬৬ নান্বারে আলহাজ্ব এ্যাডভোকেট মো: রহমত আলী (গাজীপুর-৩) রেলপথ মন্ত্রী মহোদয় আনুগ্রহ করিয়া বলবেন কি, আমার নির্বাচনী এলাকার শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনে আপনার প্রতিশ্রুতি আন্তঃনগর যমুনা ট্রেনটির যাত্রা বিরতি কবে থেকে শুরু হইবে? উত্তরে তৎকালীন রেল মন্ত্রী জনাব, মোঃ মুজিবুল হক শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতির বিষয়টি মাঠ পর্যায়ে পরিক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। রেলমন্ত্রীর এমন প্রতিশ্রুতির পর অননুমোদিত ভাবে দু’মিনিট যাত্রাবিরতি করলেও বৈধভাবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের যাত্রা বিরতির অনুমোদন মেলেনি। চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ফাইলটি রেলমন্ত্রনালয়ে পড়ে থাকে। তারপর দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর পর ১০ জানুয়ারী ২০২০ সালে বৈধভাবে দু’মিনিট যাত্রাবিরতি অনুমোদন দিল বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন