শ্রীপুরে আশিকের ছুটে চলায় বাল্য বিবাহ বন্ধ হচ্ছে কিশোরীদের

0
51

জি নিউজ ডেস্ক: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রতিটি অলিগলিতে যার ছুটে চলা। কোথাও কোন বাল্যিবিবাহের খরর পেলে তা বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মেহেদী হাসান আশিক নামের ২৫ বছরের এক যুবক।সে শ্রীপুর পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের ফখরুল ইসলামের ছেলে।গত ৮ বছর ধরে বাল্য বিবাহ বন্ধের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিনিয়ত এ কাজে মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায়।অনেক সময় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েও বাল্যিবিবাহ বন্ধে পিছপা হয়নি এই যুবক। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় গত এক বছরে উপজেলায় ৪৩টি বাল্য বিয়ে বন্ধ হয়েছে। বাবার দারিদ্রতা পড়ালেখায় বেশিদূর যেতে পারেনি। ভাংনাহাটি রহমানিয়া কামিল মাদ্রাসা হতে ২০০৯ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বন্ধ হয়ে যায় পড়ালেখা।

২০০৮ সালে গ্রামে তাঁর চোখের সামনেই এক কিশোরী বাল্য বিয়ের শিকার হয়, কিশোরীটি তাঁর স্বামীর বাড়িতে ঠিক মতো সংসার করতে পারেনি।

শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের হাতে বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়ে কিছুদিনের মধ্যেই ফিরে আসে তার বাবার বাড়িতে। এ ঘটনা তাকে মানুষিক ভাবে আঘাত করে। এরপর থেকেই
নারী ও শিশু কল্যান সমিতি নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে নেমে পড়েন বাল্যবিবাহ বন্ধের কাজে। ২০০৯ সাল হতে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বাল্য বিয়ের খবরাখবর সংগ্রহ করে তা প্রতিরোধে ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি।গত ৯বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচশত বাল্য বিবাহ বন্ধে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়াও যে সকল কিশোরীর বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে তাদের পরিবারকে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে স্বামীর সংসার হতে পূর্ণাঙ্গ বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত বাবার সংসারে ফিরিয়ে আনা কিশোরীর সংখ্যাও পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছে।

এব্যাপারে মেহেদী হাসান আশিক বলেন, প্রত্যেকটা মানুষের সামাজিক কিছু দায়িত্ব আছে। সে তার সামাজিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।দারিদ্রতার কারনে পড়ালেখা করতে পারিনি তাই সামাজিক দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। জীবিকার তাগিদে তাকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়।তাই ছুটির দিনসহ কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলেই বেড়িয়ে পড়েন বাল্য বিবাহ বন্ধে সামাজিক সচেতনতায়। স্থানীয় প্রশাসনের সার্বক্ষনিক সহযোগিতায় সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি শ্রীপুর নারী ও শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যদের সহায়তায় বাল্য বিয়ের খারাপ দিক গুলো সম্পর্কে সকলেকে সচেতন করছেন। আগে পায়ে হেঁটে কাজ করলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান একটি বাইসাইকেল ও একটি মুঠোফোন দেয়ায় তাঁর কাজে গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বিএ জানান, আশিক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান।নিজে দরিদ্রতা কারনে লেখাপড়া করতে পারেনি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই নিজের জন্য পরিবারের জন্য কিছু না ভেবে শুধু সামাজিক নিরাপত্তা, নারী ও শিশু সুরক্ষায় কাজ করছেন। বাল্য বিবাহ বন্ধে উপজেলার পক্ষ থেকে তাকে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করে উৎসাহ প্রদান করা হয়।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার জানান, বাল্যবিয়ে আমাদের সমাজের একটি ব্যাধি, ধীরে ধীরে আমরা এ ব্যাধি থেকে বেরিয়ে আসছি। বেরিয়ে আসার মূলে রয়েছে সামাজিক প্রচারণা, একাজে আশিকের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। গত এক বছরে আশিকের সহযোগিতায় উপজেলায় ৪৩টির মত বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ হয়েছে। একাজে তাকে আরো উৎসাহ প্রদানে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশিকের হাতে একটি বাইসাইকেল ও একটি মুঠোফোন তুলে দেয়া হয়েছে।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন