শ্রীপুরে গৃহ শিক্ষকের হাতে স্কুলছাত্র খুনের রহস্য ফাঁস, গ্রেফতার-২

0
169

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃত পারভেজ শিকাদার গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার ফাউগান গ্রামের আলীম শিকদারের ছেলে এবং ফয়সাল আহমেদ একই গ্রামের আব্দুল লতিফ মোল্লাহর ছেলে। পারভেজ গত বছর স্থানীয় ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এগ্রিকালচার ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়। ফয়সাল একই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র।অপহরণ ও হত্যার শিকার শিশুটিও একই গ্রামের সৈয়দ শামীম ইকবালের ছেলে।

ভারতীয় টেলিভিশনে ধারাবাহিক ক্রাইম পেট্রোল থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে স্কুলছাত্র সাদমান ইকবাল রাকিন(১০) ফাঁদে ফেলে মুক্তিপণের ঘটনার পরিকল্পনা করেন গত ৬ মাস আগে তারই গৃহশিক্ষক পারভেজ শিকদার।১৬ ডিসেম্বর কাগজে লেখা একটি ফ্লেক্সিলোডের নাম্বারের ক্লু ধরে পারভেজ ও ফয়সালকে গ্রেফতার করে। প্রথমেই রাকিনের বাবার মুঠোফোনটি তাদের বাসা থেকে চুরি করেন।
পরে মুঠোফোনটি বন্ধ করে রেখে পরিকল্পনা সাজাতে থাকেন। একাকী কাজ করতে পারবে না ভেবে সঙ্গে নেন ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদকে।

সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার অবস্থিত র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

অপহরণের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মো.সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, গত ৫ ডিসেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ফাউগান গ্রামের সৈয়দ শামীম শামীম ইকবালের ছেলে সাদমান ইকবাল রাকিন অপহৃত হয়।রাকিন চলতি বছরে ফাউগান প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিল। পরবর্তীতে সারাদিন শিশুকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে এবং মুক্তিপণের বিষয়টি নিয়ে শ্রীপুর থানায় গত ৬ ডিসেম্বর অভিযোগ করেন শিশুটির বাবা।

পরে বাড়ির পাশেই একটি বনের ভিতরে গত ১১ ডিসেম্বর শিশু রাকিনের মরদেহের খোঁজ মেলে। এদিকে এই শিশু হত্যাকারীদের ধরতে উদ্যোগ গ্রহণ করে র‌্যাব। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ২ বছর ধরে রাকিনকে পারভেজ প্রাইভেট পড়াতো। বড় অংকের টাকা পাওয়ার আশায় ৬ মাস আগে রাকিনকে অপহরণ ও মুক্তিপণ চাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে রাকিনের বাবার মোবাইল চুরি করে।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, বিগত ৫ ডিসেম্বর বিকাল বেলায় পারভেজ ও ফয়সাল গোপনে একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে যাই রাকিনকে। পরে সেখানে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাকিনকে আটকে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু জঙ্গলের ভেতর রাকিনকে আটকাতে ব্যর্থ হয় তারা। কিন্তু সে ছাড়া পেয়ে গেলে তাদের কথা সবাইকে জানিয়ে দিবে এই ভয়ে তারা তৎক্ষণাৎ তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরে প্রথমে ফয়সাল ভিকটিমকে মাটিতে ফেলে গলা টিপে ধরে এবং পরবর্তীতে পারভেজ তার শরীর উপর বসে দুইজন একত্রিত ভাবে রাকিনের গলা টিপে ধরে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

গ্রেফতারের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিপণ চাওয়ার জন্য ফয়সাল ওই ফোন নাম্বারে একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে ২০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করে। সেই তথ্যটি আমাদের কাছে চলে আসে। পরে ওই দোকানে গিয়ে দোকানের ডাস্টবিন থেকে ওই নাম্বারের একটি চিরকুট পাওয়া যায় যেটি ফয়সাল লিখে নিয়ে এসেছিল। পরে রাকিনের বাবার সঙ্গে কথা বলে আমরা ৫-৬ জনের একটি লিস্ট তৈরি করি যাদের হাতের লেখা চিরকুটে লিখার সঙ্গে মেলানোর জন্য। পর ফয়সালের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তাকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জানান, এ ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যার কথা স্বীকার করেন।

কোন মন্তব্য নেই