শ্রীপুরে জাল দলিল বানিয়ে জমি রেজিস্ট্রির ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি :: গাজীপুরের শ্রীপুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ভূয়া জাল দলিল সম্পাদন করে জালিয়াতি করে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাত করেছে একটি চক্র। এ ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে অভিযুক্ত করে ০৪.০৭.১৯ তারিখে শ্রীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন ট্রিপল এ্যাপারেলস লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার মোঃ নূরুল হক।
আসামীরা হলো, শ্রীপুর এস আর অফিসের দলিল লেখক১। মোঃ মোশারফ হোসেন খান (৫০)। এস আর অফিসের নকল নবীশ ২। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম(৪২)। নকল নবীশ ৩। সোহেল রানা (৩০)। লেখকের কম্পোজ কারক ৪। মাইন উদ্দিন (৩৬)। দলিল লেখক মোশারফ হোসেন খানের ছোট ভাই ৫। মোঃ মোতাহার হোসেন( ৪০)। ও মোশারফ হোসেন খানের মেয়ের জামাতা ৬। ফাহাদ( ৩২)।
মামলা সুত্রে ও ট্রিপল এ্যাপারেলস লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার মোঃ নূরুল হক বলেন, আমরা দলিল লেখক মোশাররফ হোসেন খানের মাধ্যমে ইতিপূর্বে শ্রীপুর রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদন করিয়েছি।আমরা ৩০ শতাংশ একটি জমি কেনার জন্য দামধর ঠিক করে কমিশনে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য দিনক্ষন ঠিক করে লেখকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কমিশনসহ সব খরচ মিলিয়ে ৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা লাগবে বলে আমাকে জানালে । আমি ০৩.০৮. ২০১৭ ইং তারিখে সোনালি ব্যাংক শ্রীপুর শাখায় ৮লাখ ৯৫ হাজার টাকা নগদ প্রধান করি। এরপর একই দিনে সকল আসামী সহ পারটেক্স ফার্নিচার উত্তরার শো রোমে গিয়ে সাক্ষীগনের সম্মুখে জমি দাতাকে টাকা দিয়ে কমিশনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি কার্য সম্পাদন করি।আমি লেখকের কাছে দলিলের নকল উঠিয়ে দেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন,আগামীকাল দলিলের রিসিট এবং কয়েকদিন পর দলিলের নকল নেবেন। এই আমরা যে যার যার মতন চলে যাই।
এর কিছুদিন পরে ৬৩.২৮ শতাংশ জমি ক্রয়ের জন্য সকল ফিস সহ ২৯.১০.২০১৭ইং তারিখে পূর্বের ন্যায় সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর শাখায় ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করে একইভাবে রেজিস্ট্রি কার্য সম্পাদন করি। এবং পরবর্তীতে দুইটি দলিলের রিসিট এবং এবং নকল কপি প্রদান করে যাহার নাম্বার, ১১০৩৮ এবং১৫২৫৯।
আমি অত্র দলিল মূলে ট্রিপল এ্যাপারেলস নামে নামজারী জমাভাগ করে খাজনাদি পরিশোধ করে পরবর্তীতে ট্রিপল এ্যাপারেলসের নামে ব্যাংক লোন করার জন্য কাগজপত্র জমা দিলে তারা আমাদেরকে জানায় আপনাদের এই দলিল দুইটি জাল জালিয়াতি পূর্ন ভাবে সৃজিত হয়েছে।
বিষয়টি জানার পর আমি ০১.০৭ ২০১৯ তারিখে শ্রীপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে অনুসন্ধান করে দেখিতে পাই ট্রিপল এ্যাপারেলস এর নামীয় দলিল দুইটি ভূয়া। উক্ত নাম্বারের দলিল দুইটি সাতখামাইর মৌজার ৮.৭৫ শতাংশ নাজমুল আলম এবং ০৭ শতাংশ জমি আজগর আলীর নামে অন্তর্ভূক্ত আছে। আরো জানা যায় উক্ত তারিখে বা আগে পরে ট্রিপল এ্যারেলস এই নামীয় কোন দলিল সম্পাদন হইনি বা অফিসে কোন বুক ভলিয়ম নাই।পরবর্তীতে ০২.০৭.২০১৯ তারিখে সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর শাখায় অনুসন্ধান করে জানতে পারি মোট ৮,০১০০০/- ও ১৬,৮৯,১৪০/- টাকা সর্বমোট ২৪,৯০,১৪০ /-টাকা মূল্যের ৮টি প্রে অর্ডার দলিল লেখক মোশাররফ হোসেন খানের কর্মচারি মঈন দরখাস্তের মাধ্যমে উত্তোলন করেছে।
এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর বিক্ষোভ করেছেন শ্রীপুর দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির সদস্যরা। দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির সভাপতি শাহজাহান মন্ডল বলেন, কোন চুর, বাটপার, দালাল, দূর্নিতীবাজদের স্থান শ্রীপুর রেজিস্ট্রি অফিসে হবেনা। আমরা এরকম একটা কাজের জন্য ধিক্কার জানাই।দূর্নিতী জালিয়াতি যেই করুক না কেন তাকে ছার দেওয়া হবেনা। এসময় তিনি তাদেরকে অফিস থেকে অপসারণের দাবী জানান এবং আল্টিমেটাম দেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের অফিস থেকে বিতারিত করতে হবে। নয়তো আমরা যেকোন কঠিন আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। আমরা চাই এরকম জালিয়াতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওক। যাতে করে আর কেও এরকম জাল জালিয়াতি করার সাহস না করে।
সাধারন সম্পাদক ওসমান গনী খোকা বলেন, কিছু সংখ্যক লোকের জন্য সকলের দূর্নাম বদনাম হয়, তাদের বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।