শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জয়নারায়ণপুরে গ্রামে ১৪ বছরের এক কিশোরী ধর্ষণের ৬ মাস পর অপরিণত বাচ্চা প্রসব করেছে। প্রসবের পর বাচ্চাটি মারা গেছে। এ ব্যাপারে মামলা নিতে এবং আসামি গ্রেফতারে পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ঘটনা আপস করার জন্য পুলিশ ও ধর্ষকের বিরুদ্ধে ভিক্টিমদের ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আক্তার মোড়ল (৪০) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জয়নারায়ণপুর গ্রামের সাহিদ মোড়লের ছেলে।
ওই কিশোরীর বাবা জানান, শিশুকালেই মেয়েটি মাকে হারিয়েছে। মা হারা মেয়েটি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে এসে বাবার সঙ্গে শ্রীপুরের জয়নারায়নপুর গ্রামে ভাড়া বাসায় থেকে পোশাক কারখানায় চাকরি নেয় এবং কিশোরীর বাবা স্থানিয় রাজাবাড়ী বাজারে ডাল-পুড়ির ব্যবস্যা করে কষ্টকরে সংসার চালায়।মেয়েটি কারখানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাবার বয়সী আক্তার মোড়লের কুনজরে পড়ে মেয়েটি। কয়েক মাস আগে রাতে কারখানা থেকে ফেরার পথে আক্তার মোড়লের সঙ্গে থাকা ৪-৫ জন তাকে ভয় দেখিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে আক্তার মোড়ল মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। তারপর বাবাকে হত্যা করে মরদেহ গুম করার ভয় দেখিয়ে প্রায়ই তাকে ধর্ষণ করতো আক্তার মোড়ল। ৫ থেকে ৬ মাস পর মেয়ের শারীরিক গঠন বদলালে এলাকায় নানা ধরনের কথা হয়। পরে তার বাড়ি ওয়ালা খালাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি যখন স্থানীয়দের সামনে চলে আসে তখন অভিযুক্ত আক্তার মোড়ল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গত ১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মেয়েটি কারখানা থেকে এসে ঘরে একা ছিল। এ সময় আক্তার মোড়ল ও তার সহযোগী ঘরে প্রবেশ করে মেয়েটিকে চাকু দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গর্ভপাতের ওষুধ খাইয়ে দেয়। পরদিন ব্যাথা উঠলে মেয়েকে পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান বাবা। সেখানে ওই কিশোরী একটি অপরিণত সন্তান প্রসব করে। পরে চিকিৎসকরা মা-মেয়েকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে নেয়ার পথে নবজাতকটি মারা যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এ ঘটনার সমাধান দিতে স্থানীয় সমাজপতিরা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে ওই কিশোরীর পরিবার শ্রীপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে তা গ্রহণ করে পুলিশ। কিশোরী অভিযোগ দিয়ে বাড়ি ফিরলে হাজির হন শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এখলাস উদ্দিন ফরাজী। সেখানে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে কিশোরী ও তার বাবাকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তারা স্বাক্ষর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় কিশোরীর সামনেই তার বাবাকে মারধর করে পুলিশ। বিচারের দাবিতে অনড় কিশোর ও তার বাবা গাজীপুর পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন। পরে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে এ ঘটনায় মামলা রুজু হয়।
কিন্তু মামলা হওয়ার পর থেকে পুলিশ আসামি ধরা তো দূরের কথা, কিশোরীর পরিবারকেই হয়রানি করতে থাকে। অভিযুক্তের আত্মীয়-স্বজনরা পুলিশ নিয়ে এসে হুমকি দিয়ে যায়।
তাদের দাবি, মামলা তুলে নিয়ে আপস করতে হবে। পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে গত কয়েকদিন ধরে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে রয়েছে বাবা ও মেয়ে।
বাড়ীর মালিক জয়নারায়নপুর গ্রামের শামীম মিয়া জানান, গত চারদিন ধরেই নিরাপত্তাহীনতায় মেয়ে ও তার বাবা ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। কেননা দিনে পুলিশ সাদা কাগজ নিয়ে আসে, আর রাতে আসে এলাকার সন্ত্রাসীরা। এমন অবস্থায় আমরাও আতঙ্কে আছি।
তিনি আরও জানান, আক্তার মোড়ল তার চাচাতো ভাই। ভিক্টিমদের পক্ষে কথা বলায় তাকেও হুমকি দেয়া হচ্ছে।
কিশোরীর বাবাকে মারধরের কথা অস্বীকার করে শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এখলাস উদ্দিন ফরাজী জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর দেয়ার ও আপস করার প্রস্তাব দেয়ার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।
শ্রীপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সাদী জানান, ভিকটিমরা থানায় অভিযোগ দেয়ার পর ১৫ডিসেম্বরই মামলা আমলে নেয়া হয়। আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জয়শ্রী দাস বলেন, ফুসফুস গঠনের (৭মাস আগে) আগেই শিশুটি প্রসব হয়। এ ধরণের নবজাতকের বাঁচার রেকর্ড নেই।