শ্রীপুরে বিদ্যুৎ স্পর্শে কৃষকের মৃত্যু ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা! স্বজনদের ক্ষোভ

0
76

শ্রীপুরে কৃষক হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেয়ার প্রয়াস।

আনোয়ার হোসেন,স্টাফ রিপোর্টার গাজীপুরঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে অনুমোদন বা নোটিশ ছাড়াই প্রজেক্টের কাটাতারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে একজন কৃষককে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আসামিদের রেহাই দেওয়ার উদ্দেশ্যে অপমৃত্যু দেখানোর জন্য নিহতের বাড়িতে মধ্যরাতে পুলিশ পাঠান শ্রীপুর থানার ওসি। এ ঘটনায় সহযোগিতা করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সুমন। পরে স্বাক্ষর না দেওয়ায় নিহত কৃষকের স্বজনদের আটক করার হুমকি দেয় পুলিশ। কোনোভাবে-ই স্বাক্ষর না দেয়ায় ব্যর্থ হয়ে পুলিশ চলে যান। মধ্যরাতে পুলিশ পাঠিয়ে অপমৃত্যুর কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করেন শ্রীপুর থানার ওসি এএফএম নাসিম এবং ইউপি সদস্য মো. সুমন।

গত মঙ্গলবার (০৮ আগষ্ট) উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের কর্ণপুর জানপাড়া এলাকায় বিনিময় প্রজেক্টের কাটাতার থেকে ওই কৃষকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ। বিদ্যুৎপৃষ্টে নিহত কৃষকের নাম জামাল উদ্দিন (৬০)। তিনি ওই গ্রামের মৃত জনাব আলীর সন্তান।

স্থানীয়রা জানান, বিনিময় প্রজেক্টের মালিক জমি কিনে এখানে প্রজেক্ট তৈরি করে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের চারাগাছ লাগিয়ে কেয়ারটেকারের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। একই সঙ্গে প্রজেক্টের চারপাশ বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে রাখেন। সোমবার বিকেলে কৃষক জামাল উদ্দিন তার ধান ক্ষেতে সার দেওয়া ও জমে থাকা পানি ছাড়ার কাজে জমিতে নামে। এক পর্যায়ে প্রজেক্টের সীমানার কাঁটাতারে বেড়ার সাথে বিদ্যুৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান । এদিকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরেরদিন মঙ্গলবার সকালের দিকে তাকে ধানখেতে প্রজেক্টের কাঁটাতারে বেড়ার সাথে মৃত অবস্থায় পান। সেখানে ১৫-২০ টা বন্যপ্রাণী (সাপ ও ব্যাঙ) বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত অবস্থায় দেখা যায়।

কৃষক জামাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধারের আগে থেকেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওই প্রজেক্টের মালিকের পক্ষ নিয়ে ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা করেন। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি এবং মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে তিনি মীমাংসার চেষ্টা থেকে সরে দাড়ান।

এরপর রাত সাড়ে ১২ টায় ইউপি সদস্য সুমনসহ দুইজন পুলিশ সদস্য কৃষক জামাল উদ্দিনের ভাই রজব আলীর বাড়িতে যায়।

এসব বিষয়ে রজব আলী জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ থেকে সুমন মেম্বার আমাকে ফোন করতে থাকেন। আমাকে নাকি থানায় যেতে হবে। আমি না যাওয়াতে মেম্বারসহ দুইজন পুলিশ সদস্য আমাদের বাড়িতে আসে। আমাকে অপমৃত্যুর কাগজে স্বাক্ষর করতে বলে। সাথে আরো একটি কাগজ ছিল, সেখানে লেখা ছিল আমরা লাশ বুঝে পেয়েছি। লাশ না পেয়েই বুঝে পেয়েছি, এমন কাগজে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানাই। পরে তারা আমাকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। আমার ভাই মারা গেছে, প্রজেক্ট মালিকের ভুলে অথবা পরিকল্পিত হত্যা। এর শাস্তি তাকে পেতেই হবে। অপমৃত্যু হয়েছে এমন কাগজে আমি কেন স্বাক্ষর করবো। আমরা এখন মানসিকভাবে অনেক দুর্বল। আমাদের সঙ্গে পুলিশ এবং মেম্বারের এমন আচরণ করা মোটেও উচিত হয়নি। পুলিশ কেন অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে একটি স্পষ্ট হত্যাকে অপমৃত্যু দেখানোর জন্য ভয়ভীতি দেখাবে? জাতির কাছে এটাই আমার প্রশ্ন। পুলিশ নিজেই যদি অপরাধ করে আমরা যাবো কোথায় ?

ইউপি সদস্য সুমন জানান, দুইজন পুলিশ সদস্য রাতে এখানে এসে আমাকে বললো ওসি স্যার নাকি তাদেরকে ওই দুইটা কাগজে স্বাক্ষর নিতে পাঠিয়েছেন। আমার সহায়তা চেয়েছেন, পরে আমিসহ যাই। তাদের বাড়ি গিয়ে ওই কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলি। তারা সেটা বুঝে পড়ে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর আমি আর জোর করিনি।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি এএফএম নাসিম বলেন, রাতে পুলিশ পাঠিয়েছি। সারাদিন তারা থানায় এ মৃত্যুর বিষয়ে লিখিতভাবে অবগত করেননি, এ কারণে তাদের যেন থানায় এসে কষ্ট করতে না হয় তাই রাতে সেবা দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলাম। অপমৃত্যুর কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য পুলিশ নিহতের স্বজনদের হুমকি দিতে পারেন কি-না ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বাক্ষাতে কথা বলার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন।

কোন মন্তব্য নেই