শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর মাওনা এলাকায় স্বামীকে গলাকেটে হত্যা ও মরদেহ এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় স্ত্রী সামিরা ও শশুরকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১, পোড়াবাড়ী ক্যাম্প।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, আঃ রহমানের স্ত্রী মোসাঃ সামিরা আক্তার(২৬), মোঃ আলী হোসেন(৫৫), উজিরপুর থানার প্রয়াত ফজলুল হকের ছেলে। , এ/পি-জয়দেবপুর (ছামিদুল এর বাসার ভাড়াটিয়া)।
র্যাব -১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানীর কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন (জি), বিএন আজ দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আঃ রহমান(৫২) হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, আসামী সামিরার ভাষ্যমতে, সামিরা নিহত ভিকটিমের ৪র্থ স্ত্রী এবং ভিকটিম পেশায় একজন জমির ব্যবসায়ী ছিলেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ভিকটিম আঃ রহমান রতন নামের তার এক ব্যবসায়িক পার্টনার এর সাথে স্ত্রী সামিরাকে দিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন কাজে লিপ্ত করে।পরে ঐ দিনই রাত অনুমানিক ১১ টার দিকে রতন নামে ঐ ব্যক্তি তাদের বাসা হতে চলে যায়। পরে আসামী সামিরা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভোর আনুমানিক তিনটার দিকে বাসায় থাকা ধারালো দা দ্বারা তার স্বামী আঃ রহমানকে ঘুমন্ত অবস্থায় জবাই করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আসামী লাশকে তোশকে মুড়িয়ে রাখে। লাশ যেন চেনা না যায় তার জন্য লাশের মুখ এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়। হত্যাকারী ভিকটিমের ৪র্থ স্ত্রী সামিরা হত্যা পরবর্তী ৩ দিন একই বাসায় অবস্থান করে অবশেষে লাশ সরিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়ে বাবা-মার সহায়তায় উক্ত বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
সে আরো জানায়, আসামী সামিরা পালিয়ে প্রথমে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার ফুলবাড়ী এলাকায় তার এক বান্ধবীর বাসায় দুই দিন আত্মগোপন করে থাকে এবং সেখান থেকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পালিয়ে তার মামার বাসা নওগাঁয় যায়, সেখানে কিছুদিন অবস্থান করে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে এসে রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকায় তার চাচার বাসায় আত্মগোপন করে থাকে। অবশেষে র্যাব তাদেরকে রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকা হইতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী সামিরা উক্ত খুনের ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা দেয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় , আসামী সামিরা এবং ভিকটিম এর উভয়ই বাড়ী গাজীপুর শ্রীপুর এলাকায় হওয়ার সুবাদে দুজনের মধ্যে পূর্ব পরিচিত ছিল। গত ২০১৬ সালে ভিকটিম আঃ রহমার তার ২য় স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বসবাস করত। সামিরা টঙ্গী সরকারী কলেজে ডিগ্রি পরীক্ষার্থী ছিল বিধায় তাদের দুজনের মধ্যে পূর্ব পরিচিতি থাকার কারণে সামিরা ভিকটিমের টঙ্গী বাসায় থেকে তার ডিগ্রি পরীক্ষা দিত, সেই সুবাদে আঃ রহমান সামিরাকে বিভিন্ন ভাবে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে ভিকটিম আঃ রহমান সামিরাকে কৌশলে খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ পান করিয়ে অজ্ঞান করে তার টঙ্গীর বাসায় তাকে একাধিক বার ধর্ষণ করে এবং ধর্ষনের ভিডিও ধারন করে। পরবর্তীতে ধর্ষনের ভিডিও এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে ভিকটিম আঃ রহমান আসামী সামিরাকে বিভিন্ন সময় দিনের পর দিন ধর্ষণ করে আসে। পরে ধর্ষনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় সামিরার প্রথম স্বামী তাকে ডিভোর্স দেয়, তারপর থেকে সামিরা শ্রীপুর নয়নপুর এলাকায় একটি ঔষধের দোকান পরিচালনা করে জীবিকা নিবাহ করে আসিতেছিল। গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভিকটিম সামিরাকে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক কোর্টের মাধ্যমে বিবাহ করে এবং তাকে নিয়ে শ্রীপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করে।
প্রষঙ্গত: গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার প্রশিকা মোড়ের দক্ষিণ পার্শ্বে বিল্লাল হোসেনের বাসা থেকে গলাকাটা অর্ধগলিত আব্দুর রহমান (৫২) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বাড়িওয়ালা বিল্লাল হোসেন পঁচা গন্ধ পেয়ে শ্রীপুর থানায় খবর দেয় খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সিআইডি গাজীপুর এবং ক্রাইম সিন কে খবর দিলে ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে এসে তারা অর্ধ গলিত এই লাশটি উদ্ধার করাহয়।