শ্রীপুরে স্বামীকে হত্যার পর ওয়ারড্রবে লাশ লুকিয়ে রেখে অফিস করলেন স্ত্রী

0
3682

শ্রীপুরে স্বামীকে হত্যার পর ওয়ারড্রবে লাশ লুকিয়ে রেখে অফিস করলেন স্ত্রী

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার গিলারচালা গ্রাম থেকে ছয় টুকরা বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে শ্রীপুর মডেল থানা পুলিশ।

শুক্রবার (২৫ জানুয়ারী) বিকেলে শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী এলাকার মেঘনা পোশাক কারখানার পশ্চিম পাশের সীমানায় বাঁশঝাড় থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রী জীবন নাহার (২৬) ও তার এক স্বজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত রফিকুল ইসলাম (৩০) ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার উলামাকান্দা গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে। সে গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী এলাকার আতিকুল ইসলাম ভূট্টুর বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় হাউ আর ইউ পোশাক কারখানায় চাকুরী করতো এবং জীবন নাহার মেঘনা কম্পোজিট মিলের চাকুরী করতো।

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম মোল্লা জানান, কারখানার পশ্চিম পাশে বাঁশঝাড়ে একটি বস্তা পরে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে তারা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালিয়ে রফিকুলের স্ত্রী জীবন নাহার কে আটক করে। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে মেঘনা কম্পোজিট কারখানার পিছন থেকে রফিকুলের দেহ, একটি ময়লা ভর্তি ডামের ভিতর থেকে, দুই হাত ও মাথা এবং একটি বাথরুমের পিছন থেকে দুই পা উদ্ধার করে।

শুক্ররাত রাতে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেবুন নাহার জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয় তার (জেবুন)। ঝগড়ার এক পর্যায়ে ইট দিয়ে রফিকুলের মাথায় আঘাত করেন তিনি। এতে রফিকুল অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রফিকুলকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহটি ঘরের ওয়ারড্রবের ভেতরে রেখে কর্মস্থলে চলে যান। এ সময় তাদের মেয়েটি পাশেই জেবুন নাহারের ছোট বোনের বাসায় ছিল। তিনি রাত ৮টার দিকে কর্মস্থল থেকে ফিরে ১১টা পর্যন্ত তিনি বোনের বাসায় ছিলেন এবং সেখানেই রাতের খাবার সেরেছেন।রাত ১১টার দিকে নিজের বাসায় গিয়ে রান্নাঘরের বটিতে শান দেন। এরপর ওয়ারড্রব থেকে স্বামীর মরদেহ বের করে প্রথমে দুই পা কাটেন। পরে দুই হাত কেটে মাথাও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। ৬ টুকরো করা মরদেহটি গুমের উদ্দেশ্যে একটি বস্তায় ভরে ফেলেন। পরে দুই হাত ও বিচ্ছিন্ন মাথা ময়লার ড্রামে ফেলেন। এরপর বাসা থেকে কয়েকশ গজ দূরে ময়লার ভাগাড়ে বস্তাবন্দি দেহটি ফেলে আসেন। এর প্রায় ৪০০ গজ দূরে শৌচাগারের পেছনে নিয়ে ফেলেন পায়ের দুটি টুকরো। শৌচাগারের পাশে দুই হাত ও খণ্ডিত মাথা রাখা ড্রামটিও ফেলে যান। সবশেষে ব্যবহৃত বটিটিও বাইরে লুকিয়ে রাখেন জেবুন নাহার।

তিনি আরো জানান, জেবুন নাহারের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রাতেই নৃশংসতায় ব্যবহৃত বটিটি জব্দ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রোমহর্ষক ওই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন জেবুন নাহার।তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম মোল্লা।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে পারিবারিক বিরোধে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলামের বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে জেবুন নাহারকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছেন।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন