সংকট থেকে বের হচ্ছে না রাজনীতি,সমাধান কোন পথে!

0
25

বাংলাদেশে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনীতিতে সংকট চলছে। রাজনৈতিক সংকটের সমাধানের কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রমেই সংকটের বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে দেশের রাজনীতি।দেশে রাজনীতিতে সংকট থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে গণতন্ত্র না থাকা।প্রতিটি নাগরিকের রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে অধিকার রয়েছে। নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন করে গণতন্ত্রের জয়গান দেশে রয়েছে এটা বলা যাবে না।এদেশে এ পর্যন্ত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে রাজনৈতিক দলের প্রভাব ছিল না। ওই নির্বাচনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।এদেশের রাজনীতির সংকট নিরসনের জন্য আবারও ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অনুসরণ করে ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি হওয়া উচিত।ধারণা করা যায়, তবেই জনগণের পূর্ণ অধিকার আদায় সম্ভব হবে। বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো চায় আগামী নির্বাচনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হোক। গত ১০ম তম এবং ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুটি এদেশের সবচেয়ে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যেখানে জনগণের অধিকার হরণ করা হয়েছে। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এদেশে রাজনীতিতে চরম সংকট ঘনীভূত হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীনদের কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মিটিং মিছিল করার সুযোগ সুবিধা তেমন পাইনি। এই সংকটের প্রভাব দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়েছে।এই দুটি নির্বাচন মূলত নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার ফসল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৩৪ টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করে আওয়ামীলীগ। এ নির্বাচনে ১৫৩ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় সংসদ সদস্যরা। যা বাংলাদেশের নির্বাচনে নজিরবিহীন ঘটনা। এই নির্বাচনটিতে রাজনৈতিক সংকট তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে বেশি দায়ী।নিরপেক্ষতার জাল ভেঙে বর্তমান সরকারের আয়ত্তে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করেছিল নির্বাচন কমিশন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে তার সূত্র ধরে ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনটি ও রাজনৈতিক সংকটে আবর্তিত হয়।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটিতে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রিত ও একচেটিয়া সমর্থনের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয় নির্বাচন। নির্বাচনটি সম্পূর্ণ এক পাক্ষিক হয়েছে। সেখানেও আওয়ামীলীগ জয়লাভ করে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বিএনপি ও তাদের সমর্থিত ঐক্যফ্রন্ট ।বিএনপি ও তাদের সমর্থিত ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৭ টি আসন পেয়ে সংসদে যায়। টানা দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এভাবে নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা,যোগ্যতা এবং নিরপেক্ষতা কেমন হয়েছে তা নিয়ে সর্ব মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ১০ম ও ১১ম তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে বিরূপ মন্তব্য এবং নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব কি ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবে? ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে যেহেতু পরবর্তী দুটি নির্বাচনে ও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হলেও কোনো সমাধান হয়নাই তাহলে কিভাবে বিশ্বাস করা যায় আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না? একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সবসময়ই একে অপরকে দোষারোপ করেছে। কেউই কোনো সমাধানের পথে হাঁটে নাই। আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতার আধিপত্য নিয়ে বিএনপিকে দোষারোপ করছে ।অন্যদিকে, বিএনপি নানা ইস্যু নিয়ে সরকারের দোষারোপ করছে। কারো পক্ষ থেকেই সংলাপ কিংবা সমঝোতার আভাস পাওয়া যায় নাই । উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিতর্ক। পৃথিবীতে সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো সংলাপ। কিন্তু দেশের বড় দুটি দলের মধ্যে একটিদল উত্তর মেরুতে আরেকটি দল দক্ষিণ মেরুতে অবস্থান করছে। এই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান কি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হবে না? এই রাজনীতির ভয়াবহ সংকটের কারণে দেশের মধ্যে সহিংসতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশের রাজনীতির সংকটের সমাধান কি তাহলে বিদেশিদের হাতে? দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দেখা যাচ্ছে দেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশিদের নানা উদ্বেগ।বিদেশিদের নিষেধাজ্ঞায় নানা চাপে রয়েছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিবৃতিতে বলছে, এদেশে তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। এদেশে নির্বাচন আসলেই বিদেশিরা নানা জটিলতা সৃষ্টি করে থাকে। সংকটের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের রাজনীতি। এ সংকট নিরসনের জন্য দেশে সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ গঠন করে সংলাপে বসতে হবে। সংলাপে সকলের মতামতের সিদ্ধান্তের উপরই ন্যাস্ত থাকতে হবে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০ টি আসনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে। সেখানে বিএনপি পেয়েছিল ৩০ টি আসন।জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে। ওই নির্বাচনে বাধ্য হয়ে বিএনপিকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। কারণ নির্বাচনটি সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। দেশের রাজনীতির সংকট নিরসনের জন্য এবং জনগণের ভোটের অধিকার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশের জন্য ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ফিরে যেতে হবে। ওই নির্বাচনের পরিবেশটুকু আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাস্তবায়ন করলে দেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের জয়গান রচিত হবে।

বাদশাহ আবদুল্লাহ লেখক ও
কলামিস্ট।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন