গাজীপুর: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে জামায়াতের ওপর ‘ইতিহাসের বর্বরতম নির্যাতন হয়েছে’। “আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। জুলুম করে ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ড’ ঘটানো হয়েছে।”
“আমরা দেখতে চাই, এই জগতে সেই ‘হত্যাকারীদের’ বিচার হয়েছে। ‘হত্যার’ পরিকল্পনাকারী, মাস্টারমাইন্ড, বাস্তবায়নকারী, আদালতে বসে যারা ‘দুষ্টু’ রায় দিয়েছেন, ‘মিথ্যা’ সাক্ষী দিয়েছেন, তদন্ত করতে গিয়ে যারা ‘নাটক’ সাজিয়েছেন, এদের কেউ যেন ‘অপরাধ’ থেকে রেহাই না পায়।”
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে শহরের রাজবাড়ী মাঠে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের পরিবার সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ৫ অগাস্টের পর জামায়াতের নেতাকর্মীরা কোথাও কারও ব্যবসা বা বাড়িতে হামলা করেনি বলেও দাবি করেন শফিকুর।
তিনি আরো বলেন,তৈরি পোশাক শিল্পের অসন্তোষের পেছনে চক্রান্ত আছে বলেও দাবি করে বলেন, আমাদের দেশে মতলববাজরা মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে রাখে। উদ্যোক্তা এবং মালিক যদি না থাকে শ্রমিকরা কোথায় কাজ করবেন? শিল্প যদি না বাঁচে কর্মসংস্থান কোথায় হবে? আমরা এমন সমাজ চাই, ব্যবসায়ীরা তার জায়গায় বসে ব্যবসা করবেন, কোনও দুর্বৃত্তের যাতে সাহস না হয় তার কাছে চাঁদা চাওয়ার। বাজারে স্বস্তি থাকবে, সহনীয় দ্রব্যমূল্য থাকবে, যাতে প্রতিটি মানুষ তার সামর্থ্য অনুযায়ী স্বস্তির সঙ্গে বসবাস করতে পারেন।’
তিনি বলেন, যারা এই সমাজের দুশমন তারাই শিল্প ধ্বংস করতে চায়। তারা শ্রমিকদের আবেগকে উসকে দিয়ে রাস্তায় নামায়। তারা বলে, শ্রমিকরা ঘরে বসে বেনিফিট পাবে। কিছু কিছু মালিক আছেন তারা চান শ্রমিকদের ঘাম নয়, পারলে রক্ত চুষে নিতে, এটি অন্যায়। শিল্প যারা বাঁচাবে আপনি তাদের বাঁচতে দিন। আপনি তাদের সম্মান করবেন, তারা সমস্ত শক্তি উজাড় করে আপনাকে সবকিছু বিলিয়ে যাবে। এতে শিল্পের উন্নতি হবে, তাদেরও উন্নতি হবে। আমরা এ রকম বৈষম্যহীন একটা সমাজ চাই। আমরা এমন একটা সমাজ চাই, যেই সমাজে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুর চারটি অধিকার (খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্য এবং সুশিক্ষা) সরকার তাকে দিতে বাধ্য থাকবে।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে জনগণের অর্থে কেনা অস্ত্র ও বুলেট জনগণের বুকে ধরার দুঃসাহস করবে এমন কোনও সন্ত্রাসী আর দেখতে চাই না। পুরো বাংলাদেশকে এক করতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতকে এক করতে হবে। বিশ্বকে জানান দিতে হবে– দেশ এবং জাতির স্বার্থে আমাদের মধ্যে কোনও বিভাজন নেই। যত বিভাজন রেখা তৈরি করা হয়েছিল, সবগুলোকে আমরা পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছি।
‘আর আমরা কাউকে এই জাতিকে বিভক্ত করার সুযোগ করে দেবো না। দলের, ধর্মের ও গোষ্ঠীর ভিত্তিতে আমরা জাতিকে আর ভাগ করার সুযোগ দেবো না। জাতিকে তারাই ভাগ করে, যারা জাতির দুশমন। যারা জাতির বন্ধু, তারা জাতিকে কখনও ভাগ এবং বিভক্ত করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে আমরা আপসহীন। এখন থেকে বাংলাদেশের মানুষ কালোকে কালো এবং সাদাকে সাদা বলবে। আমরা চাই এমন একটা দেশ হবে, যেই দেশে বৈষম্য থাকবে না।’
আগামীতে দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের এমন একটা সমাজ প্রয়োজন যে সমাজে শিক্ষিত মানুষগুলো কলমের খোঁচায় হাজার হাজার কোটি টাকা জাতির কাছ থেকে লুটপাট করবে না। আমরা কোনও শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদকে আদালতের বিচারক হতে দেখতে চাই না। কোনও দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে দেখতে চাই না। একজন সরকারি কর্মকর্তা রাষ্ট্রের সেবক, তিনি দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির সেবক না। আমরা এমন কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী আগামীতে দেখতে চাই না, যাদের বাধ্য করা হবে রাষ্ট্র, জনগণ বাদ দিয়ে গোষ্ঠীর পূজা করার জন্য। এমন একটা দেশ আমাদের সবার কামনা। সেই দেশটা আমাদেরই গড়তে হবে, ইনশাল্লাহ। এ জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা শহীদ হয়েছেন তারা চাকরি পাওয়ার জন্য বা কারও সহযোগিতা পাওয়ার জন্য লড়াই করেননি। তারা আমাদের কাছে মর্যাদার এবং সম্মানের পাত্র। তারা নিঃস্বার্থ লড়াই করেছেন জাতিকে সম্মানিত করার জন্য। জাতির দায়িত্ব এখন তাদের পরিবারকে সম্মানিত করা। এটি করতে হবে, এর বিকল্প নেই। সরকারের কাছে দাবি জানাই, তাদের সঠিক স্বীকৃতিটা যেন দেওয়া হয়। প্রতিটি শহীদ পরিবার থেকে কমপক্ষে একজনকে যেন সরকার সম্মানজনক চাকরির ব্যবস্থা করে। লড়াই করে যারা আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন তাদেরও যেন সম্মানজনক চাকরি দেওয়া হয়। তারা যেন কারও করুণার পাত্র হয়ে না থাকেন।’