হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে দশ বছরের ১ মাদ্রাসার ছাত্র হত্যা!
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:: হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বড়ইউড়ি ইউনিয়নের কদুপুরে চাঞ্চল্যকর মাদ্রাসা ছাত্র বিলাল মিয়া হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। সেই সাথে ঘাতক লায়েক আহমদ হৃদয় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি লোমহর্ষক ঘটনার রহস্য উদঘাটন করায় বানিয়াচং থানা পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। শনিবার বিকেলে লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল-৪ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে বানিয়াচং থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব জানান, গত ২৬ জানুয়ারি কদুপুর গ্রামের ধানের জমি থেকে বিলাল মিয়া (১০) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে নোয়াগাঁও গ্রামের ঈমান উদ্দিন ওরফে গয়বুল্লাহ’র পুত্র। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। এরপর থেকে শুরু হয় একটি ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের তদন্ত। গত ২৫ জানুয়ারি কদুপুর বাজারে তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। নিহত বিলাল নানার বাড়ি কদুপুরে থেকে স্থানীয় কদুপুর মিছবা-উল-উলুম মাদ্রাসায় ১ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। ওইদিন রাতে কদুপুর মিছবা-উল-উলুম মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে কদুপুর বাজারে মেলা বসে। বিলাল আহমদ উক্ত মেলাতে সন্ধ্যা অনুমান ০৬ টার দিকে খেলনা কিনার জন্য আসে। এসময় প্রতিবেশী নোয়াগাঁও গ্রামের মিশুক চালক লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) এর মাথায় খারাপ বুদ্ধি আসে। সে কদুপুর গ্রামের আরও ৩ শিশুসহ বয়স যথাক্রমে (১৭), (১৬), (১৬) পরিকল্পনা করে উক্ত ৩ শিশুর সাথে বলাৎকার করার। অতঃপর লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) নিহত বিলাল আহমদ (০৯) কে তার সাথী জড়িত ৩ শিশুসহ বিলালকে জোরপূর্বক মিশুক গাড়ীতে উঠায়। এরপর লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) তার মিশুক চালিয়ে কদুপুর গ্রামের জনৈক নুর মিয়ার বাড়ীর পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে লায়েক আহমদ হৃদয় ও ৩ জন নিহত বিলাল আহমেদ (০৯) কে নামিয়ে জোরপূর্বক নিহত বিলালকে ধরে আহমদীয়া মক্তবের মালিকানাধীন শুকনো জমিতে নিয়ে যায়। সেখানে আসামী লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) প্রথমে বিলালকে জোরপূর্বক বলাৎকার করে। এরপর ৩ শিশুও পালাক্রমে বিলালকে বলাৎকর করে।
একপর্যায়ে বিলাল উক্ত ঘটনার বিষয়টি বাড়ীতে গিয়ে বিচার দিবে বললে আসামী লায়েক আহমদ হৃদয় ও ৩ জন শিশুদেরকে জানায়। এতে হৃদয়সহ ৩ শিশু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বিলালকে খুন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে আসামী লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) বিলাল আহমেদ (৯) কে গলায় ও নাকে টিপ দিয়া ধরে। বাকি ৩ শিশু ভিকটিমের হাতে পায়ে ধরাধরি করে ঘটনাস্থল বোরোধানি জমিতে পানি ও কাঁদার মধ্যে নিয়া যায়। সেখানে আসামী লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) নিহত বিলালের ঘাড়ে দুই হাত দিয়া চাপ দিয়া ধরে কাদার মধ্যে মুখমন্ডল ঢুকিয়ে রাখে। অন্য ৩ শিশু ভিকটিম বিলাল আহমদকে হাতে পায়ে ধরে রাখে। ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ গোপন করার জন্য ৪ জন মিলে লাশের উপরে কাদা দিয়ে ঢেকে রাখে।
পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি ভোর পর্যন্ত ঘাতক হৃদয়সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। পরে তারা পুলিশের নিকট ঘটনা স্বীকার করলে গতকাল আদালতে হৃদয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। নুর মিয়ার পুকুর সেচ দিয়ে নিহত বিলাল আহমদ এর পরিহিত প্যান্ট এবং অপহরণ কাজে ব্যবহৃত আসামী লায়েক আহমদ হৃদয়ের চালিত মিশুক (অটো রিক্সা) জব্দ করে পুলিশ। এরপর গ্রেফতারকৃত ৪ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেন।