হবিগঞ্জের সাতছড়ি সংলগ্ন সড়কে যানবাহনে গণডাকাতি

0
37

এমএইছ চৌধুরী জুনাইদ, শায়েসত্মাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা
হবিগঞ্জের চুনারম্নঘাট উপজেলাধীন ঢাকা-সিলেট পুরাতন সড়কে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা যাত্রীদেরকে অস্ত্র দেখিয়ে শারিরীক নির্যাতন করে নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। গতকাল রাত ৮টায় এ ঘটনাটি ঘটে। জানাগেছে, হবিগঞ্জের চুনারম্নঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট পুরাতন সড়ক প্রতিরোধ করে যানবাহনে গণডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। মুখোশধারী একদল ডাকাত দেশীয় অস্ত্রহাতে নিয়ে রাসত্মায় যানবাহনে গনডাকাতি শুরম্ন করে। ডাকাতরা যাত্রীদের প্রহার করে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান দ্রব্যাদিসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে চুনারম্নঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছার পূর্বেই ডাকাতরা পালিয়ে যেতে সÿম হয়। প্রতÿদর্শী সূত্রে জানায়, ওই দিন চুনারম্নঘাট উপজেলার সাতছড়ি উদ্যান সংলগ্ন সড়কে মুখোশধারী একদল ডাকাত কয়েকটি সিএনজি অটোরিক্সা, প্রাইভেটকারসহ প্রায় ২০টি গাড়ির যাত্রীদের মারধর করে মূল্যবান দ্রব্য, মোবাইল ফোনসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। চুনারম্নঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমিরম্নজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ডাকাতদল কয়েকটি যানবাহন আটকিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বেই ডাকাতরা পালিয়ে গেছে।

এদিকে শায়েসত্মাগঞ্জ হতে বালস্না পর্যন্ত পরিত্যক্ত রেলপথে চলছে লুটপাট হবিগঞ্জ জেলার শায়েসত্মাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন থেকে সীমান্ত এলাকা বালস্না পর্যন্ত রেলপথটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার কারণে লুটপাট হচ্ছে শতশত কোটি টাকার রেলসম্পদ। জানাযায়, শায়েসত্মাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের একমাত্র শাখা রেলপথ চুনারম্নঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা বালস্না থেকে হবিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ছিল। ১৯২৮ সালে বৃটিশ শাসনামলে প্রায় ৪৫ কি.মি. দীর্ঘ এ রেললাইনটি স্থাপিত হয়। হবিগঞ্জ জেলাধীন সীমান্ত এলাকার সকল শ্রেণীর মানুষের জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র যোগসূত্র ছিল এ ট্রেন। রেল সূত্রে জানাযায়, শায়েসত্মাগঞ্জ জংশনের এই শাখা রেলপথ বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি অন্যতম আয়ের উৎস হিসেবে গন্য হতো এবং আয়ও হতো উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে। ২০০৩ সালে হঠাৎ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্যয় শঙ্কোচনের অজুহাতে এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের অনেক শাখা রেলপথ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধামত্ম নেয়। এরই অংশ হিসেবে শায়েসত্মাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের এই আলোচ্য রেলপথও বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ রেলওয়ের এই সিদ্ধামেত্ম এ দেশে শতশত কি.মি. রেলপথ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে লুটপাট হতে থাকে শতশত কোটি টাকার রেলওয়ের সম্পদ। এ সুযোগে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের দখলে চলে যায় রেলওয়ের মহা মূল্যবান শতশত একর ভূ-সম্পত্তি। ২০০৫ সালে সরকার কর্তৃক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যা হবিগঞ্জ বাজার থেকে শায়েসত্মাগঞ্জ জংশন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কি.মি. রেলপথ অপসারণ করা হয়। এই রেলপথকে সড়কপথে রূপামত্মর প্রক্রিয়ার সুযোগে কতিপয় তষ্কর প্রকৃতির লোক স্টেশন ঘরের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, দরজা, জানালা ইত্যাদি লুট করে নিয়ে গেছে। এখন ইট সিমেনেটর তৈরী ঠুনকো কাঠামোগুলো শুধু দাঁড়িয়ে আছে। এই পরিত্যক্ত রেলপথের অস্থাবর সম্পত্তি বলতে এখন আর অবশিষ্ট কিছুই নাই, উপরন্তু এখন চলছে ভূ-সম্পত্তি দখলের মহোৎসব। এদিকে শায়েসত্মগঞ্জ থেকে বালস্না পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ কি.মি. রেলপথের ৭টি স্টেশনের অস্থিত্ব এখন হুমকির মুখে। স্টেশন বলতে আর অবশিষ্ট তেমন কোনো কিছু নাই। শুধু জরাজীর্ণ কাঠামোগুলো দাঁড়িয়ে এর অস্থিত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তির ছত্রছায়ায় একটি মহল প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে রাতের আঁধারে মালবাহী যানবাহনে করে রেলপথের এসব সম্পদ অদৃশ্য করে দিয়েছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শায়েসত্মাগঞ্জ-বালস্না রেলপথের রেল লাইনের পাত, কাঠের সিস্নপার, পাথর, সিগন্যাল-পোস্ট, সিগন্যাল-তার, নাট-বল্টু ইত্যাদি অতি দক্ষতার সহিত উৎপাটন করে লুটপাট করা হয়েছে। স্থানে স্থানে এমন চাতুরতার সহিত এই চৌর্যকর্ম সম্পাদন করা হয়েছে যে, উক্ত স্থানে রেল লাইনের কোন চিহ্ন খোঁজেই পাওয়া যায়না। দেখলে মনে হয় এটা কোন গ্রাম্য মনোরম মেঠোপথ। আলাপ কালে শায়েসত্মাগঞ্জ জিআরপি পুলিশ কর্মকর্তা এস আই সাহিদুল ইসলাম বলেন, শায়েসত্মাগঞ্জ-বালস্না রেলপথের সরকারি সম্পদ চুরি রোধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছি। আরও জানাগেছে, এ রেলপথ পূনরায় চালু করার প্রত্যয়ে কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে অচিরেই এই রেলপথ সংস্কার কাজ আরম্ভ হবে। অত্র অঞ্চলের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত, শায়েসত্মাগঞ্জ থেকে সিমান্ত এলাকা বালস্না পর্যন্ত দীর্ঘ রেলপথ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে শায়েসত্মাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের নামের সহিত সংযুক্ত জংশন শব্দটি ও আর থাকবেনা। জংশন হিসেবে শায়েসত্মাগঞ্জের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত, গুরুত্ব ও মর্যাদা হারিয়ে যাবে চিরতরে। শায়েসত্মাগঞ্জ জংশনের গৌরব, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য এ রেলপথটি অতি দ্রুত পুনরায় সচল করা আবশ্যক। এটি শায়েসত্মাগঞ্জ, চুনারম্নঘাট, বালস্না ও হবিগঞ্জ সদর এলাকার লাখো মানুষের প্রাণের দাবী

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন