জাবির ইবন আবদুল্লাহ নবুয়তের ত্রয়োদশ বছরে যে ৭৫ জন মদিনাবাসী মিনার এ গোপন অবস্থানে মহানবীর হাতে শপথ নিয়েছিলেন তাঁদেরই একজন। তিনি মহানবীর সাথে প্রধান সব যুদ্ধ ও অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। মহানবী (সা)-এর মৃত্যুর পর শোকের দুর্বহ ভার নিয়ে নিজেকে বিলিয়ে নিয়েছিলেন কুরআন পাঠ এবং কুরআন পাঠ এবং কুরআন ও হাদীস শিক্ষাদান কাজে। মহানবীর (সাঃ) একটা হাদীসের মূল্য তাঁর কাছে ছিল তাঁর সবকিছুর চেয়ে বেশী মূল্যবান। একবার তিনি খবর পেলেন ‘কিসাস’ বা বদলা সম্পর্কিত একটি হাদীস রয়েছে আবদুল্লাহ বিন আনিসের কাছে এবং তিনি বাস করছেন সিরিয়ায়। খবর পেয়েই জাবির ইবনে আবদুল্লাহ সিরিয়ায় যাওয়ার জন্যে একটি উট কিনলেন এবং সিরিয়া যাত্রা করলেন সেই হাদীসটি শোনার জন্যে। দীর্ঘ পথ পড়ি দিয়ে তিনি পৌঁছলেন সিরিয়ায়। আবদুল্লাহ ইবনে আনিসের বাড়ীতে। আব্দুল্লাহ ইবনে আনিসের কাছে খবর পাঠালেন যে, মদীনা থেকে জাবির ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর সাথে দেখা করতে এসেছে। নাম শুনেই চমকে উঠলেন আবদুল্লাহ বিন আনিস। বললেন, কোন জাবির, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ? বলেই তড়িঘড়ি এমন অবস্থার মধ্যে বাড়ী থেকে বের হলেন যে, তার গা থেকে চাদর পড়ে গিয়ে পায়ের তলায় মথিত হতে লাগল। কিন্তু সিদিকে কোন ভ্রক্ষেপ নেই। তিনি গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন আবদুল্লাহ ইবনে জাবিরকে অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভক্তি নিয়ে। জাবির বললেন, আমি শুনলাম আপনার কাছে ‘কিসাস’ সংক্রান্ত একটা হাদীস রয়েছে। আমি এসেছি সে হাদীস শুনতে। বলুন সে হাদীসটি। আবদুল্লাহ বিন আনিস বর্ণনা করলেন, “আমি রাসূল (সা) থেকে শুনেছি, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে একত্রিত করবেন। সবাই উলংগ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় থাকবে এবং বুহম হবে (‘বুহম’ অর্থ কারও কিছুই থাকবে না)। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ডেকে বলবেন, ‘আমি বদলা দেব, আমিই মালিক। আমি যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেক জান্নাতীকে প্রত্যেক দোজখী থেকে এবং প্রত্যেক দোজখী থেকে প্রত্যেক দোজখী থেকে প্রত্যেক জান্নাতীকে হক আদায় করে না দেব, ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে জান্নাতে অথবা দোজখে নিক্ষেপ করবো না। এমনকি একটি সাধারণ থাপ্পড়ের কিসাস বা বদলাও আদায় করে দেব। এই বদলা কিভাবে দেয়া হবে আমরা তো সবাই তখন শূন্য হাতে থাকব? এই প্রশ্নের জবাবে রাসূল (সা) বললেন, “নেকি ওবদী দিয়ে ফায়সালা করা হবে।” এই হাদীস শুনে নেয়ার পর জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আবার মদীনা যাত্রা করলেন। গ্রন্থ: সাহাবীদের জীবনী ও ঘটনা