৩ দফা দাবীতে ৭তারিখ( শুক্রবার) ঢাকায় হেফাজতের বিক্ষোভ মিছিল।

0
35

জি নিউজ ডেস্কঃ রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত মিয়ানমারের খুনিদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে পূর্ণ নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আদায় করে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ এবং দেশে ইসলামধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাশ সহ ৩ দফা দাবীতে ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলাম আগামী ৭ সেপ্টেম্বর বাদ জুমা বায়তুল মুকাররম উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।
আজ (৩ সেপ্টেম্বর) সোমবার বাদ আছর ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের বৈঠক থেকে এই কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় অনুষ্ঠিত বৈঠকটির সভাপতিত্ব করেছেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগর সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, শায়খুল হাদীস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা মূসা বিন ইজহার, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা নাজমুল হাসান, মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী, মুফতী জাকির হোসাইন, মাওলানা শরীফুল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মদ ফায়সাল আহমদ, মাওলানা মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
বৈঠকে মিয়ানমার প্রসঙ্গে হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, মিয়ানমার মানবতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে, রোহিঙ্গা নারীদেরকে গণধর্ষণ করে হত্যা করেছে এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করে জাতি উচ্ছেদ ও জাতি নির্মূল অভিযান চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।
হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্বসম্প্রদায় ও বিশ্বমানবতা বর্তমানে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের কর্তব্য- এই অনুকূল বিশ্ব মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে জোরদার কূটনীতির মাধ্যমে মিয়ানমারের হত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদেরকে বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় তুলতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব এবং নিরাপত্তাদানের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি আদায় করে আন্তর্জাতিক তদারকির মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেরকে স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে জোর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করা।
হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে ত্রাণসহায়তা ও আশ্রয় দিয়ে রাখাটাই এই সংকটের কার্যকর সমাধান নয়। বরং পূর্ণ অধিকার ও নিরাপত্তা আদায় করে তাদেরকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর সফল প্রচেষ্টাতেই সমাধান আসতে পারে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে এই দেশে চুপচাপ রেখে দেওয়াটা মিয়ানমার সরকার ও মুসলিমবিদ্বেষী ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যকেই পুরণ করবে।
বৈঠকে স্বঘোষিত ইসলাম নির্মূলবাদী মুরতাদ আসাদ নূরকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ায় গভীর অসন্তোষ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, এই কুলাঙ্গার আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম, প্রাণ প্রিয় নবী মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, উম্মাহাতুল মু’মিনীন এবং ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি নিয়ে প্রকাশ্যে জঘন্য কটূক্তি করেছে। যার ভিডিও চিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই দেখেছেন। একজন কট্টরপন্থি ইসলাম নির্মূলবাদি নাস্তিক-মুরতাদক
ে গ্রেফতার করে কিছু দিন পর ছেড়ে দিয়ে সরকার দেশের ৯০% মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমানিত ও হেয় করেছে।
বৈঠকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, দেশের যে কেউ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের কারো অবমাননা করলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়, অথচ শত শত কোটি মুসলমানের প্রাণাধিক প্রিয় আল্লাহ, তদীয় রাসূল ও ইসলামধর্মকে অবমাননা করলে এই দেশে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় না। এটা সরকারের ইসলামবিমুখী নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
বৈঠকে ঢাকা মহানগর হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। হেফাজতে ইসলাম ঈমান-আক্বীদাভিত্তিক একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন। হেফাজতে ইসলাম কাউকে ক্ষমতায় বসানোর বা কাউকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার সিঁড়ি হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হবে না, তেমনি হেফাজতে ইসলাম ঈমান-আক্বীদা, ইসলাম ধর্ম, ন্যায়-নীতি, ইনসাফ এবং জনগণ ও জাতীয় স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে কারো সাথে আপোষ করেও চলবে না।
ঢাকা মহানগর হেফাজতের বৈঠকে গৃহীত ৩ দফা দাবী হচ্ছে- (১) ইসলাম নির্মূলবাদী নাস্তিক-মুরতাদদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে কঠোর আইন পাশ করে তা কার্যকর করতে হবে। (২) পূর্ণ নাগরিকত্ব, নাগরিক অধিকার এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আদায় করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে তাদের নিজে দেশে ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে বাংলাদেশ সরকারকে জোরদার কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। (৩) রোহিঙ্গা গণহত্যা, ধর্ষণ, বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগ এবং জাতি উচ্ছেদ অভিযানে জড়িত মিয়ানমারের মানবতাবিরোধী অপরাধী ও খলনায়কদেরকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারকে জোরদার কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন