জি নিউজ ডেস্কঃ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন,সরকার কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়াকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।
আজ সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আশংকার কথা জানান।
তিনি বলেন, আদালত কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড সাড়ে তিনমাস পরে গত পরশু(রোববার) আদালতের নির্দেশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলো, পরীক্ষা করতে গিয়েছিলো। তারা পরীক্ষা করে দেখে বিস্মিত হয়েছেন যে গত সাড়ে তিন মাসে তার কোনো রকম রক্ত পরীক্ষা করা হয় নাই, তার ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয় নাই, তার কোনো এক্সরে করা হয়নি, তার ব্লাড প্রেসার মাপা হয় নাই, তার কোনো চিকিতসা দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন,কারাগারে যথা সময়ে দেশনেত্রীর চিকিতসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করার ফলে এবং পরিত্যক্ত কারাগারে রেখে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবণতি ঘটানোর মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের আশংকার কথাটা আমরা বার বার বলে আসছি। সেই ষড়যন্ত্র, সেই চক্রান্তটি হচ্ছে তাকে চিকিতসা না দিয়ে অকালে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া। সুচিকিতসা না দেয়া এবং কয়েকদিন পর পরেই তাকে(খালেদা জিয়া) হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজির করে মানসিক ভাবে হেনস্তা করা- এই সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দেশবাসী মনে করে বলে বিএনপি মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন,আজকে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আমরা জানাতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো সরকারের কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ ডিজারভ করেন না, তার প্রাপ্য নয়। আমরা মনে করি, অবিলম্বে দেশনেত্রীর সর্বোত্তম সুচিকিতসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান করতে হবে। এটাতে কোনো কাল বিলম্ব করা যাবে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,কাল বিলম্ব করলে দেশনেত্রী যদি কোনো শারীরিক ক্ষতি হয় তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব জনগনের দ্বারা এই অনির্বাচিত সরকারকেই বহন করতে হবে।
দলের চেয়ারপারসনের সর্বোত্তম সুচিকিতসার জন্য যদি বাড়তি ব্যয়ের প্রয়োজন হলে তা দল বহন করতে রাজি বলেও জানান মহাসচিব।
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, সাড়ে তিন মাস আগে যে অসুখ নিয়ে তিনি(বেগম খালেদা জিয়া) হাসপাতালে(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়েছিলেন সেই অসুখগুলো আরো বেড়ে গেছে। বাম কাঁদে ব্যথা বৃদ্ধি পেয়েছে, ডান কাঁদে নতুন করে ব্যাথা হচ্ছে। বাম বাহু, বাম পায়ে এবং কবজিতে ব্যথা অনেক বেশি বেড়েছে। ফলে কারো সাহায্য ছাড়া তিনি এখন দাঁড়াতে ও চলতে পারছেন না। প্রচন্ড ব্যাথা ও কাঁপুনির জন্য তিনি হাত দিয়ে কিছু ধরেও রাখতে পারছেন না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,তিনি(বেগম খালেদা জিয়া) যে রোগগুলোতে ভোগছেন তা অত্যন্ত মারাত্মক রোগ। তার বয়স ৭৩ এর পথে। এই বয়সে এই রোগগুলোর যদি নিয়মিত চিকিতসা না হয়, প্রতিদিন যদি মনিটর না করা হয়, তাহলে তার জীবনের প্রতি মারাত্মক হুমকি এসে যেতে পারে।গত সাড়ে তিন মাসের দেশনেত্রীর হৃদরোগ, লিভার কিংবা কিডনির কোনো পরীক্ষা করা হয়নি। যা নিয়মিতভাবে করা অত্যন্ত জরুরী ছিলো।
বিএনপি মহাসচিব জানান, বেগম খালেদা জিয়া রিউমেটরিটক আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস ম্যারিটা, হাইপারটেনশন, অস্ট্রিও আর্থারাইটিস, টানেল সিস্ড্রোম, ফ্রোজেন স্লোডার, লাম্বার স্টোনাইসিস, থাইটিকা, ক্রনিক হাইপো নিথ্রেমিয়া, ক্রোনিক কিডনি রোগে ভোগছেন। যা এখন মারাত্মক রূপ নিয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার সাতে পরিবারের সাক্ষাতের অনুমতিও ‘দীর্ঘ সময় পরে’ দেয়া হয় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্য দীর্ঘ সময় পর সীমিত সময়ের জন্য দেখা করতে দেয়া হয়। দলের পক্ষ থেকে গত চার মাস ধরে কাউকে দেখা করতে অনুমতি দেয়া হয়নি এবংকি তার আইনজীবীরা সাক্ষাত পায়নি।
মামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য দীর্ঘকাল ধরে পরিকল্পনা করে আসছে। যে মামলাগুলো একটার পর একটা দেয়া হয়েছে- এই মামলার কোনটারই কোনো ভিত্তি নেই। এই মামলাগুলো দিয়ে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে তিনি যে জামিন প্রাপ্ত হয়েছিলেন সেটারও কোনো সুবিধাদি তাকে গ্রহন করতে দেয়া হয়নি।এই ধরনের আচরণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে করা হবে-এটা সাধারণ মানুষ ও দেশবাসীর কল্পনারও বাইরে, এটা ধারনারও বাইরে। আজকে গণতন্ত্রের এই নেতাকে প্রতিটি মানুষ ভালোবাসে, যিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। সেই নেত্রীকে এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।আমরা বার বার বলেছি এই ধরনের আচরণ কখনোই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না, কাম্য হতে পারে না।
তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, স্বৈর শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী সারাজীবন ব্যয় করেছেন এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। তিনি সেই প্রধানমন্ত্রী যিনি দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রনী ভুমিকা পালণ করেছিলেন। আজকে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমরা দেখছি সেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করবার ব্যাপারে তার ভুমিকা ছিলো অপরিসীম।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি(বেগম খালেদা জিয়া) সরকারে থাকার সময়ে তার বহু কাজ আছে যে কাজগুলো দেশের অর্থণৈতিক উন্নয়ন ও জনগনের কল্যাণে শুধু দেশে নয়, বিশ্বে পর্য়ন্ত সমাদৃত হয়েছিলো।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীপ্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।