জি-নিউজ ডেস্কঃ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিশ্ব যখন লন্ডবন্ড।সেই মুহুতে বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ ও বর্তমানে গাজীপুর ও নরসিংদী দ্রুত বাড়ছে এর বিস্তার।
ময়মনসিংহে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পিসিআর ল্যাবে বিভাগের চার জেলায় (ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা) ১৫’শ ৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে ৮২জনের।
এরমধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় শনিবার নতুন ২ জনসহ ২১ জনের মধ্যে করোনা পাওয়া যায়। আর এই ২১ জনের মধ্যে ৯ জনই একটি হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স।
আক্রান্তরা গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক, সহকারী চিকিৎসক, নার্স। এরমধ্যে তিনজন চিকিৎসক, তিনজন উপসহকারী চিকিৎসক, দুইজন স্টাফ নার্স ও একজন হিসাব রক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা নার্সও রয়েছেন। এনিয়ে জেলায় ২১জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এরমধ্যে ১১জনই গফরগাঁওয়ের। ইতিমধ্যে জেলার ফুলপুর এলাকার একজন কৃষক করোনা আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১৩ই এপ্রিল দুই চিকিৎসকের করোনা পজেটিভ ধরা পরার পর থেকে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি লকডাউন করে দেয়া হয়। আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন রয়েছেন ঐ হাসপাতালের আইসোলেশনে। অন্যদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে বাধ্যতামুলক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। একে একে হাসপাতালের ৯জন স্টাফ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় অন্যান্য স্টাফ ও রোগীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। চিকিৎসকসহ অন্যান্যরা হাসপাতালে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীরা চিকিৎসা সম্পন্ন না করেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে। নতুন কোনো রোগীও হাসপাতালে ভর্তি হতে আসছে না।
গফরগাঁও পৌর শহরের শিলাশী এলাকার একজন নারীর শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ঐ নারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসার কারণেই হাসপাতালে করোনা ছড়িয়ে পড়ে- এমন ধারনা করা হছে। কিন্তু হাসপাতালের কর্মরত এক স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ঢাকা থেকে এসে অফিস করা দুইজন চিকিৎসকের মাধ্যমে এই করোনা ভাইরাস হাসপাতালে ছড়িয়েছে। দুইজনের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকের আত্নীয় করোনা আক্রান্ত। আর পুরুষ চিকিৎসক থাকেন মিরপুরে। তারা পূর্ব পরিচিত থাকায় দুজন একসাথে এক গাড়িতে করে অফিস করতেন। তাদের মাধ্যমেই হাসপাতালের স্টাফদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন খান মোবাইল ফোনে জানান, “করোনা আতঙ্কের কারণে হাসপাতালে রোগী নেই বললেই চলে। কয়েকজন স্টাফ দিয়ে শুধু জরুরী বিভাগটি চালু রাখা হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের জরুরী স্বাস্থ্য সেবার কথা চিন্তা করে আমরা ২৪ঘন্টা মোবাইল সেবা চালু রেখেছি।”
ডা. খান আরো বলেন, “গফরগাঁও পৌর শহরের শিলাশী এলাকার একজন নারীর শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তাকে ময়মনসিংহে বিশেষায়িত এসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন জেনে সেখানে কর্মরত চারজন ডাক্তার ও একজন ল্যাব টেকনেশিয়ানের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। তখন দুই ডাক্তারের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে ৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়। তখন তিনজন উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের করোনা শনাক্ত হয়।”
তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার পুনরায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২৫ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠালে ডাক্তার, সিনিয়র নার্সসহ তিনজনের করোনাভাইরাস পজেটিভ এসেছে। তাদের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা সিনিয়র স্টাফ নার্স রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকীদেরও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত উপজেলায় মোট ১০ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে।
ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন ডা. একেএম মশিউল আলম জানান, ১৮ই এপ্রিল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫শ ৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে ২১ জন। আজ (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত ২১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী আইসোলেশনে রয়েছে। এরমধ্যে নগরীর এসকে হাসপাতালে ১২জন, গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪জন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪জন ও হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১জন করোনা রোগী আইসোলেশনে রয়েছে।
সুত্রঃ ডিবিসি নিউজ।