জি নিউজ ডেস্কঃ গাজীপুর পুলিশ সুপারের কার্য্যালয়ে সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে শুরু হয়েছে পরিচিতি সভা। সংবাদকর্মীরা যথাসময় উপস্থিত হয়, সকাল ১১টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৫০ মিনিট দেরিতে আরম্ভ হয়, গত ২৬ আগস্ট রোববার গাজীপুর জেলায় যোগদান করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি) সামসুন্নাহার। টাইম ম্যানেজমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগামীতে এটিও নজরে রাখলে ভাল হয়। জেলা পুলিশের কনফারেন্স রুমে ঝোলানো ঘড়িতে এটিই ছিল সময়। সভা শেষ হয়েছে দুপুর ১ টা ৫৫ মিনিটে। ৬৭জন সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। একই প্রতিষ্ঠানের দুয়েকজন ছাড়া পেশাদার সাংবাদিকদের উপস্থিতি ও অভিযোগ পরামর্শ দিয়ে কথা বলেছেন একাদিক সংবাদকর্মী। টি শার্ট বা পাঞ্জাবী পড়ে বিভিন্ন সভায় আয়েশী ঢংঙ্গে যোগদানের প্রবণতা দেখা যায়নি,আজ প্রায় সকল পুলিশ কর্মকর্তাকে ইউনিফরম পড়ে হাজির হতে দেখা গেছে।
পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার তার বক্তব্যে চারটি বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবেন বলে জানিয়েছেন। মাদক, নারী ও শিশু এবং সন্ত্রাস বিষয়ে এই জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলে প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, পুলিশ যদি আক্রমনের শিকার হয় বা দায়িত্ব পালনকালে হয়রানির শিকার হয় তবে ওই ক্ষেত্রেও তিনি জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবেন।
মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবী আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে। মাদকসেবীদের কিভাবে মাদকমুক্ত করা যায় এটি ভেবে দেখতে হবে। যৌতুক, নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ ও চাঁদাবাজি, জঙ্গি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) তাৎক্ষণিক একটি সেলফোন নম্বর চালুসহ ফেসবুক পেজ চালু করে মিডিয়াসেল গঠনের কথা বলেছেন পুলিশ সুপার। কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ও জয়দেবপুরের শিববাড়িতে চলাচালকারী অবৈধ যানবাহন বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগের কথা সভায় জানানো হয়েছে।
নতুন পুলিশ সুপার আগের তুলনায় কম অধিক্ষেত্র পেয়েছেন। কারণ, গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পলিশ চালু হওয়ায় জেলার আয়তন কমেছে। যারা সভায় অভিযোগ করেছেন তাদের অধিকাংশ মেট্রোপলিটন এলাকায় যুক্ত। কিন্তু অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাঁধা নেই। এজেণ্ডার বাইরে আলোচনা অনেক ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক।
সংবাদকর্মীদের নিকট থেকে কি ধরণের সহযোগিতা দরকার পুলিশের এই প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার পরিপূরক শব্দ ব্যবহার করেছেন। এটি একটি লাগসই বিষয়। পুলিশ ও সংবাদকর্মী ইচ্ছা করলে পরিপূরক ভূমিকা পালন করতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না একজন সংবাদকর্মী কিভাবে তথ্য যোগাড় করবেন এটি সাধারণ প্রশিক্ষণের ব্যাপার। পুলিশ তথ্য দিতে না চাইলেও একটি সূত্র বা আভাস পাওয়া যায়। যেটি দিয়ে খবর পরিবেশন করতে বাঁধা থাকে না।
নতুন পুলিশ সুপার তার পর্যবেক্ষণে কিছু উদঘাটন করতে পেরেছেন কি না বা তিনি কোথা থেকে কোথায় আগে হাত দিবেন) কাজ শুরু করতে চান এই প্রশ্নের আলোকে জিরো টলারেন্স বিষয় উপস্থাপন করেন। তিনি ও তার পুলিশ বিভাগ রুটিন ওয়ার্কের বাইরে কোন কাজের পরিকল্পনা করেছেন কিনা এমন প্রশ্নও তোলা হয়। এই প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, দৃশ্যমান কাজ আগে করা হবে। রাতারাতি কিছু পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে পুলিশ হবে জনবান্ধব। সব সময় পুলিশের দরজা খোলা থাকবে, রাত বিরাত বলে কোন টার্ম থাকবে না। বরং সংবাদকর্মীরা বিরক্ত হয়ে যায় কিনা এই সংশয় প্রকাশ করেন পুলিশ সুপার।
সামসুন্নাহার নিজেকে সরকারের কর্মচারি দাবি করে পোশাকের মর্যাদা রক্ষার ইঙ্গিত দেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমি মাঠের কামলা, মাঠে থেকে কাজ করতে চাই’। জেলায় ১৩৮৭ জন পুলিশ সদস্যের পরিবারে কোন পুলিশ জণগণকে হয়রানি করলে ওই পুলিশের ইউনিফরম খুলে নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। আরও বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের চালানের বাইরে কোন টাকা পয়সা কেউ লেনদেন করবেন না। জিডি বা মামলা দায়ের করতে কোন টাকা লাগে না এটি জানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন পুলিশ সুপার। ওসির রুমের পাশে কাঁচের রুমে লেনদেন হয় বলে জনশ্রতি রয়েছে। এই কাঁচের রুমের কাণ্ড দেখার জন্য দেয়ালের বাইরে সিসিটিভি না রেখে রুমের ভেতরে সাঁটানো যায় কি না ভেবে দেখতে পারেন।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে পুলিশ সুপার বলেন, ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। ব্যাড নিউজের চেয়ে গুড মেসেজ পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। গতকাল সোমবার (২৭ আগস্ট) টঙ্গী বাজার থেকে সামসুল আলম নামে একজনকে অপহরণ করা হয়েছিল। সামসুল জমি বিক্রেতা। রাতেই তাকে উদ্ধার করা গেছে।
পরিচিতি সভায় গাজীপুরে কর্মরত এনটিভি, একাত্তর টিভি, নিউজ টুয়েন্টিফোর, চ্যানল আই, চ্যানেল নাইন, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, ইত্তেফাক, প্রথম আলো, ভাওয়াল, গণমুখ, কালের কণ্ঠ, জাগো নিউজ, খোলা কাগজ, ডেইলি স্টার, সমকাল, সংগ্রাম, যায় যায় দিন, যোগফল প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
বিগত সময়ে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টে পুলিশের অসহযোগিতা, আবাসিক হোটেলে অভিযানে সহায়তা না করা, জুয়ার আসরে পৃষ্ঠপোষকতা করাসহ বিভিন্ন অপকর্মে পুলিশ জড়িত রয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। পুলিশের কোন কোন সদস্য মাদক বহন করে নিরীহ মানুষের পকেটে মাদক ঢোকানোর অভিযোগ রয়েছে।
এফআইআর, আসামীকে অব্যাহতি ও ফাইনাল রিপার্টের কাগজে স্বাক্ষর করাতে টাকার দরকার হয় বলে জানা গেছে। রিমাণ্ডের আবেদনেও একই পরিণতি। বিশেষত ডিবি পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই।
সভায় আলোচনা পর্যায়ের সব নোট রেকর্ড করা হয়েছে। রেকর্ডকৃত নোট কিভাবে বাস্তবায়ন হবে এটি পুলিশের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু যেসব অভিযোগের তির পুলিশের প্রতি নিক্ষেপ করা হয়েছে এগুলো একটি একটি করে ধরে দেখা উচিত।
কথা বলার কারণে কথা বলা আর বাস্তবায়নের টার্গেট ঠিক করা কখনও এক নয়। একদিনেও সব সমস্যা আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবে সমস্যার পাহাড় গড়ে ওঠেছে এতে কোন সন্দেহ নাই। কেবল পুলিশ সুপার ইচ্ছা করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন আস্থা নেই। তবে আইকন ঠিক না থাকলে নিচের দিকে লাইন ঠিক রাখা মুশকিল হয়। একজনের অভিনয় আরেকজন কখনও করতে পারে না। পুলিশ সুপার যেখানে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন সেখানে কাউকে প্রক্সি দেওয়ার সমস্যা সব সময় থাকে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরকে পুলিশ সুপার ও পুলিশ বিভাগ কিভাবে মূল্যায়ন করব