নিউজ ডেস্ক ঢাকা অফিসঃ সংবাদ সম্মেলনে হেফাজত, কওমি স্বীকৃতি ও সংবর্ধনা বিষয়ে দীর্ঘ কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী আলেমদের সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে কেউ যদি আমার জন্য দোয়া করে, কেউ যদি ভালো বলে তাহলে তো দেশের মানুষের খুশি হওয়ার কথা। বুধবার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে খবরের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রশ্ন করেন, এক সময়ের হেফাজত ইসলাম যারা আপনার শত্রু ছিল কিন্তু আজ তারা আপনাকে সংবর্ধনা দেবেন এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কী? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার কোন শত্রু ছিল না, এটা ভুল। আমি কাউকে শত্রুর চোখে দেখিনি। হ্যাঁ, ওই রাতে (৫ মে ২০১৩) খালেদা জিয়া বক্তব্য দিল ঢাকাবাসী আপনারা সবাই আসুন, শাপলা চত্বর তারা দখল করবে। এরপর হেফাজত ইসলাম, ভাঙচুরসহ নানারকম ঘটনা। আমি আমার মতো চেষ্টা করেছি, এরকম ঘটনা ও পরিস্থিতি বাংলাদেশে যেন আর না ঘটে।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশে মানুষের নিরাপত্তা দরকার, তখন সবাই ভীত ছিল যেকোন সময় যেকোনো ঘটনা তারা ঘটাতে পারে, খালেদা জিয়া তাদের ওপেনলি সমর্থন দিয়ে দিল, জামাত সমর্থন দিল। এমনও বলেছিল যে তারা দুই’শ গরু রেখে দিয়েছে, গরু খাওয়াবে কিন্তু তারা কাউকে গরু খাওয়ায় নাই। ওই মাদরাসার বাচ্চাদের ভাগ্যে একটা রুটি আর কলা ছাড়া কিছু জুটে নাই। এটা হলো বাস্তবতা।” “যাইহোক আমার কথা হচ্ছে, মানুষের একটা টেনশন ছিল, আমি যেভাবেই পারি তাদের টেনশনে দূর করেছি। এজন্য তো আমাকে সাধুবাদ দেবেন। দ্বিতীয় কথা হলো তারা (হেফাজত ইসলাম) মনে করত আওয়ামী লীগ তো ধর্মেই বিশ্বাস করে না, এখন তারা যদি প্রশংসা করে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আপনাদেরও নিশ্চয় স্বস্তি হয়েছে যে ওইরকম পরিস্থিতি আর বাংলাদেশে হবে না। জনগণকে নিয়ে কাজ করি, জনগণের ভেতরে শান্তি, স্বস্তি ফিরিয়ে আনা আমার দায়িত্ব। সেটা আমি কিভাবে করব তা নির্ভর করে আমার পদক্ষেপের ওপর। খুব সহজে কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, সমস্যার সমাধান করে দিতে পারি – এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা ছিল, আমি সেটা করে দিয়েছি।” যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। কওমি মাদরাসা শিক্ষা ও স্বীকৃতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাদরাস শিক্ষার ব্যাপারে আমি বলব, এখানে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে পড়ে, দেশের অনেক গরিব-এতিম এখানে ঠাঁই পায় কিন্তু তাদের কোনো স্বীকৃতি ছিল না, কিছুই ছিল না, তারা নিজেরা নিজেদের মতো পড়ত। আমাদের যে শিক্ষা নীতিমালায় আছে যে সকলকেই শিক্ষা দিতে হবে। আপনারা যদি দেখেন যে আমাদের এ অঞ্চলে, উপমহাদেশে শিক্ষার যাত্রা শুরু কিন্তু মাদরাসা থেকে। হিন্দু ধর্মে যেমন টোল থেকে আর আমাদের মুসলমানদের মাদরাসা থেকে। কাজেই এটাকে আমরা সম্পূর্ণ বাতিল করতে পারি না। যেখানে ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ ছেলে মেয়ে প্রতি বছর পড়াশোনা করে যাচ্ছেন, তারা কী পড়ছে, কোথায় যাচ্ছে ,তাদের কোনো ঠিকানা নেই, তাদেরকে সামাজিকভাবে একটা স্বীকৃতি দেওয়া, সম্মান দেওয়া বা তাদের জীবন জীবিকার পথটা সৃষ্টি করে দেওয়া এটা কি আমাদের কর্তব্য নয়?-সেই ধারণা থেকেই আমি চেষ্টা করে গেছি এগুলো একটু সমাধান করে যেতে। আজকে সেটা আমরা করে দিয়েছি। বললেন প্রধানমন্ত্রী।” আলেমদের সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, “এ (স্বীকৃতি) কারণে যদি আমার জন্য দোয়া করে, কেউ যদি ভালো বলে তাহলো তো দেশের মানুষের খুশি হওয়ার কথা। আর যারা আমার সত্যিকার অর্থে ভালো চায় না, আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছেন, তারা হয়তো মনে কষ্ট পাবে-অখুশি হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ সারা দেশের মানুষ এ ব্যাপারে স্বস্তি এবং খুশি হয়েছে। ওই যে শিশু যাদের কোনো ভবিষ্যত ছিল না, ঠিকানা ছিল না, তাদের একটা ভবিষ্যতের ঠিকানা করে দিতে পেরেছি এটাই আমার সবচেয়ে বড় সেটিকফেকশন।”