৩ যুগ ধরে শিকলে বাঁধা সাফাজউদ্দিনের জীবন

0
14

৩ যুগ ধরে শিকলে বাঁধা সাফাজউদ্দিনের জীবন

শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধিঃ বাড়ির উঠানের এক পাশে মাটির ঘর। নেই দরজা জানালা। ঘরের এক কোনে রয়েছে ভাঙ্গা চৌকি।পাশেই পুঁতা রয়েছে কাঠের খুঁটি। চৌকির উপর বসে থাকা বৃদ্ধকে কোমরে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে খুঁটির সাথে। শুয়ার বসার জায়গা নেই। পাখা বাতিহীন অন্ধকার ঘরে এভাবেই কেটে গেছে ৩ যুগ। শিকলে বাঁধা জীবনের যৌবন পাড় করে এখন বৃদ্ধ সাফাজউদ্দিন।

শিকল বন্দি সাফাজউদ্দিন মোল্লা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মূলাইদ গ্রামের মৃত রজব আলী মোল্লার ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, মূলাইদ গ্রামে মোল্লা বাড়ির উঠানের এক পাশে মাটির ঘর। বাহির থেকে চট দিয়ে দু’টি জানালা একটি দরজা বন্ধ রয়েছে। ঘরের ভেতর ঘুট ঘুটে অন্ধকার। নেই বৈদ্যুতিক পাখা বাতি। এক পাশে রয়েছে বাড়ির অপ্রয়োজনীয় জিনিষ। অন্য পাশে রয়েছে একটি ভাঙ্গা জড়াজির্ণ চৌকি। চৌকির এক কোনে রয়েছে ময়লা ছেড়া বালিশ। এতে মাথার স্পর্স লাগেনি হয়তো বহু বছর। অপরিষ্কার পাত্রে রয়েছে কিছু ভাত। রংয়ের পটে রয়েছে পানি। ভাঙ্গা চৌকির এক কোনে যুবু থোবু হয়ে নির্বাক বসে আছেন সাফাজ উদ্দিন। ঘরে ডুকতেই ফেল ফেল করে শুধু তাকিয়ে থাকেন। মুখে কি যেন বিরবির করতে থাকেন। মুখে লম্বা দাড়ি গুপ, মাথায় লম্বা চুল। পরনে ছেড়া মলিন জামা কাপড়। গায়ে জড়ানো পুরাতন মলিন চাদর। ঘরের ভেতর দুর্গন্ধ।হয়তো গোসল করেনি অনেক দিন। অনাহার,অনিদ্রা, অপুষ্টিতে চোখ দু’টি দেবে গেছে। যুগ যুগ ধরে শিকল বন্দি হয়ে আলো বাতাস হীন বদ্ধ ঘরে এভাবেই কেটে যাচ্ছে তার দিন।বৃদ্ধ বয়সে এখন পরে আছেন অবহেলা অনাদর বিনা চিকিৎসায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ অমানবিক পরিবেশে।

মোল্লাবাড়িতে গিয়ে সাফাজ উদ্দিনের কথা জানতে চাইলে কথা হয় তার বড় ভাই আফাজ উদ্দিন মেল্লার সাথে। তিনি জানান, তারা ৫ ভাই ৪বোন। আফাজউদ্দিন মৃত রজব আলীর প্রথম স্ত্রীর সন্তান। মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা ছায়তুন নেছাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎ মায়ের গর্ভে জন্মনেয় সাফাজুদ্দিন সহ ৪ভাই ৪বোন। সকল ভাই বোনদের মধ্যে সাফাজুদ্দিন দ্বিতীয়।

তিনি আরও বলেন,সাফাজুদ্দিনের মাথায় জটা ছিল। বিয়ের পর তার স্ত্রী কৌশলে চুলের জট কেটে ফেলে। এরপর থেকেই সে অস্বাভাবিক হয়ে পরে। এরই মধ্যে তার মেয়ে ঝর্ণা আক্তারের জন্ম হয়। কিছুদিন পর অসুস্থ্য স্বামীকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেন সাফাজ উদ্দিনের স্ত্রী। প্রায় তিন যুগ ধরে শিকল বন্দি আছে সাফাজ উদ্দিন।

সাফাজ উদ্দিনের ছোট ভাই মো. হেলাল মোল্লা জানান, সাফাজ উদ্দিনের এক মাত্র মেয়ে ঝর্ণা আক্তার । মামা’রা লালন পালন করে বিয়ে দেন তাকে। ছোট বেলা থেকেই দেখছেন তার বাবা শিকল বন্দি। যখন বুজতে শিখেছেন তখন জানতে পারেন তার বাবা মানুষিক ভারসাম্যহীন।

তিনি আরও বলেন, চাচারা বাবার কি চিকিৎসা করিয়েছে তার কোন প্রমান নেই।বহু বছর ধরে বাবা বিনা চিকিৎসায় পরে আছে। তার স্বামী ইট ভাটার লড়ি চালক। স্বামীর সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালানোর পর বাবার ভরণ পোষণ চিকিৎসা দিতে পারেন না। বাবার দূর্ভোগের জীবন দেখে শুধুই চোখের জল ফেলেন তিনি। প্রায় ৩ যুগ ধরে তার বাবা শিকল বন্দি হয়ে অন্ধকার ঘরে অমানবিক পনিবেশে দিন কাটাচ্ছে। ভাঙ্গা চৌকিতে তার দিন কাটে বসে থেকে। সামান্য ঘুমানোর মতো এতটুকু জায়গা নেই তার।

সাফাজ উদ্দিনের বৃদ্ধা মা ছায়তুন নেছা জানান, তার স্ত্রী নেই। কেও দেখাশুনা করেনা। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ছেলেকে ফেলে দিতে পারেন না। এ ভাবেই যুগ যুগ ধরে বেধে রেখে ভরণ পোষণ দিচ্ছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মোবারক হোসেন জানান, সাফাজ উদ্দিন আমার অতি পরিচিত আত্নীয়। বহুবছর ধরে সে অসুস্থ্য । তার একটি মেয়ে আছে। সাফাজ উদ্দিনের মানবিক জীবন যাপনের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো.মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। আমি সরেজমিনে খবরনিয়ে এব্যপারে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নিব।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন