শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জাল ওয়ারিশান সনদ প্রদানের অভিযোগ
মোঃ জিয়াউল হক, শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির ও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে আদিবাসিদের জমি বিক্রি করতে ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশননের চেয়ারম্যানের ওয়ারিশান সনদ প্রয়োজন হয়। কেননা ওয়ারিশান সনদ ব্যতিত জেলা প্রশাসন কর্তৃক আদিবাসীদের ভূমি বিক্রির পারমিশন মিলে না।
বাদীর লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধিগাঁও মৌজার বিআরএস খতিয়ান নং-৮১, দাগ নং- ৯৯০ অত্র দাগে মৃত বশির মারাক, সিংঞ্জন সাংমা ও নরেশ সাংমার নামে রের্কডভুক্ত ৩একর ১৭ শতাংশ জমি রয়েছে। বশির মারাকের ২ কন্যা কোকিলা ও সরলা, সিংরঞ্জন সাংমার ২ কন্যা পালিতা ও প্রণিতা, এবং নরেশ সাংমার ২ কন্যা- প্রণিতা ও রোটিলা। তারা প্রত্যেকেই জীবিত এবং হিস্যানুযায়ী প্রত্যেকেই সাড়ে ৩৬শতাংশ করে জমির প্রকৃত মালিক। গান্ধিগাঁও গ্রামের জনৈক আফছর আলীর পালিত পুত্র মোস্তফা ও ঝিনাইগাতী উপজেলার ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. নবেশ খকশি একে অপরের সাথে যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে মোস্তফাকে বশির মারকের এক কন্যা সরলা, সিংরঞ্জন সাংমা’র এক কন্যা প্রণিতা ও নরেশ সাংমা’র এক কন্যা প্রণিতাকে একমাত্র মেয়ে দেখিয়ে ওয়ারিশান সনদ প্রদান করেন। যে ওয়ারিশান সনদের মাধ্যমে মোস্তফা প্রকৃত ৬মালিকের মধ্যে ৩ দেখিয়ে ৬ জনের মোট ২একর ১৯শতাংশ জমি রেজিস্ট্রিমুলে সাব-কওলা দলিল সম্পাদন করেন। পরবর্তীতে মোস্তফা উক্ত জমির দলিলমুলে গোপণে খাজনা খারিজও করে নেয়।
অপরদিকে উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নেন ভারুয়া গ্রামের অপর এক আদিবাসী বেদেন সাংমা বশির মারাকের এক কন্যা কোকিলা ও সিংরঞ্জন সাংমার এক কন্যা পালিতার নিকট হতে মাতৃ সুত্রে প্রাপ্ত হিস্যানুযায়ী সাড়ে ৩৬শতাংশ করে মোট ৭৩ শতাংশ জমি বৈধভাবে সাব-কওলা রেজিস্ট্রি দলিল করে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে বেদেন সাংমার উক্ত ৭৩ শতাংশ জমির খাজনা খারিজ করতে স্থানীয় ভুমি অফিসে গেলে মোস্তফা ও আদিবাসী চেয়ারম্যানের গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ!
প্রকৃতপক্ষে মোস্তফা ওয়ারিশান সনদ মুলে ৩জনের কাছ থেকে ক্রয়সুত্রে ১একর সাড়ে ৯ শতাংশ জমির মালিক। কিন্তু ভুমি খেকো
মোস্তফা তার এই অবৈধ দলিল ও খারিজমুলে প্রাপ্ত ২ একর ১৯ শতাংশ জমির মধ্যে থেকে কৌশলে একাধিক লোকের কাছে কিছু অংশ অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে আদিবাসী বেদেন সাংমা ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কর্তৃক মোস্তফার জালিয়াতি ওয়ারিশান সনদের সার্টিফিকেটের কপি সংগ্রহ করে মোস্তফা ও ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. নবেশ খকশি এবং দলিল লেখক আমির হোসেনের বিরুদ্ধে এবং খাজনা খারিজ বাতিলের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি)বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন। একদিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলী জনিত কারণে উক্ত অভিযোগ পত্রটি ফাইল বন্দি। অপরদিকে ভুমি খেকো মোস্তফা তার কুকর্ম যথারীতি চালিয়ে আসার পাশাপাশি তাদের এ অপকর্ম ঢেকে রাখার জন্য ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশি বেদেন সাংমাকে তার নিজ বাড়ীতে ডেকে এনে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এমতাবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে আদিবাসী বেদেন সাংমা। বাধ্য হয়ে তিনি উল্লেখিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে সহকারী পুলিশ সুপার, নালিতাবাড়ি সার্কেলের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওসি ঝিনাইগাতীকে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন।
অপরদিকে আদিবাসী চেয়ারম্যান মি. নবেশ খকশি বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টার পাশাপাশি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থানায় অবস্থানরত নরেশ সাংমার অপর মেয়ে রোটিলার কাছে জোরপূর্বক অলিখিত ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে গত ৯জুলাই ২০২২ ইং তারিখে বাকাকুড়া গ্রামে তার নিজ বাড়ীতে বাদী বিবাদী সহ আদিবাসী জমির প্রকৃত ওয়ারিশ দাবিদার ৬ বোনের মধ্যে ৫ বোন ওই বৈঠকে উপস্থিত হন। নবেশ খকশি বিষয়টিকে মীমাংসা না করে লোক দেখানো নাটক করেন। এমতাবস্থায়
ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কতৃর্ক এক পক্ষকে তথ্য গোপন করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে একমাত্র কন্যা দেখিয়ে ওয়ারিশান সার্টিফিকেট দেয়া আবার অন্য পক্ষকে দুই কন্যা দেখিয়ে সনদ দেয়ার বিষয়টি এখন এলাকার সবার মুখে মুখে।
ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কতৃর্ক
জাল জালিয়াতি ও ভুয়া ওয়ারিশান সনদ প্রদানের কারণে একদিকে যেমন আইনী জটিলতার সৃষ্টি, দাঙ্গা হাঙ্গামার পরিবেশ অপরদিকে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি সহ জনসাধারণ হয়রানি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি.নবেশ খকশির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দু’পক্ষকে দু’ধরণের ওয়ারিশান সনদ প্রদানের কথা স্বীকার করে বলেন, “তারা তথ্য গোপন করে আমার নিকট থেকে ওয়ারিশান সনদ নিয়েছে, যাহা আমি জানতামনা। এখন আমার করণীয় কিছু নেই। তিনি প্রাপ্ত জমি থেকে বাকি ৩ বোন না দাবী লিখে দিয়েছেন মর্মে দাবী জানালেও দলিল দেখাতে ব্যর্থ হন।
এ ব্যাপারে দলিল লেখক আমির হোসেন সরকার জানান, আমি জমি দাতা ও গ্রহিতার দেয়া কাগজ অনুযায়ী দলিল লিখেছি। তাদের ভিতরের রহস্যগুলো আমি জানতাম না।
উত্ত বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ঝিনাইগাতী থানার এএসআই আতিকুর রহমান জানান, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যপারে বেদেন সাংমা ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. নবেশ খকশি, ভুয়া দলিল গ্রহিতা মোস্তফার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন সহ তার ও বঞ্চিত ৩ বোনের অধিকার ফিরিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।