জনগণ দেশের প্রধান শক্তি। অমূল্য সম্পদও বটে। জনগণের জন্যই দেশ। এত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণের নানা দু:খ-বেদনা, অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগ মূলত রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর। এদেশে জনগণের পূর্ণ অধিকার আজও অর্জিত হয়নি। স্বাধীনতার পরে বিভিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকার হিড়িক পরে একেকজনের মধ্যে। যেই সরকার গঠন করে জনগণের উপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা চালিয়ে দেয়।এই যন্ত্রণা নানা ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে। এদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনগণের অধিকার খর্ব করা। ভোটের অধিকার, স্বাধীন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার সহ নানা ক্ষেত্রে পরাধীন করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের উপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। কারণ, এ সরকার জনগণের ভোটাধিকার নষ্ট করেছে। বারবার পায়তারা করে এ পর্যন্ত তিন মেয়াদে সরকার গঠন করেছে। জনগণকে উন্নয়নের বাণী শোনাচ্ছে। সত্যি কথা হলো,বর্তমান সরকারের আমলে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এ উন্নয়ন জনগণের জন্য বিরক্তির কারণ। উন্নয়ন দেখিয়ে সরকার নানা ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করছে। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। স্বল্প আয়ের মানুষের দু:খ দেখার কেউ নেই। বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে জনগণ জিম্মি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো টনক নড়ছে না। সরকার যদি চায় জনগণের ভোগান্তি লাঘব করতে পারে। সরকার যদি কড়া নির্দেশ প্রদান করে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবসায়ীদের উপর চাপ পড়লে বন্ধ হয়ে যেত সিন্ডিকেট। কিন্তু কে কার ভালো চায়।জনগণের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আজ এ অবস্থা। কোনো ক্ষেত্রেই আজ জনগণ কথা বলতে পারছে না।সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললেই বন্দী হওয়ার ভয়ে নীরবে থাকছে মানুষ। পূর্বে এ দেশে যেসব সরকার ক্ষমতায় ছিল প্রত্যেকর মধ্যে গণতন্ত্রের পূর্ণ জয়গান রচিত হয়নি। সবাই চেয়েছে নিজেদের আদলে সবসময় সরকার গঠন করা। এ অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতিরোধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতার ভূমিকা প্রদর্শন করতে হবে। কিন্তু এদেশে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ভেড়াজালে বন্দী। বর্তমান নির্বাচন কমিশন বলছে, সরকার যদি চায় তাহলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সরকার চাইতে হবে কেন? নির্বাচন কমিশন কেন তার নিরপেক্ষতার যোগ্যতা দেখাবে না।বর্তমান সরকারের উপর তো বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন যদি এসব অগণতান্ত্রিক, যুক্তিহীন কথা বলে তাহলে জনগণ কোথায় আস্থা ফিরে পাবে। এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার উপর ও জনগণের অনেক অভিযোগ রয়েছে। যারা দেশের নির্বাচন পরিচালনা করে তারা নিরপেক্ষ হয় না।জনগণকে ফাঁকি দিয়ে থাকে। এদেশের প্রধান খুঁটির মধ্যে একটি হলো বিচার ব্যবস্থা। যেখানে গিয়ে জনগণ তার সঠিক বিচারটা পাবে। কিন্তু এ বিচার ব্যবস্থাও সরকারের হাতে। জনগণ ও দেশের প্রশাসন দুই দিকে অবস্থান করছে। যত বড় অপরাধ সরকার পক্ষের লোকজন করুক না কেন, বিচার সহনীয় হয়ে যায়। কিন্তু বিরোধী পক্ষের কেউ ক্ষুদ্র অপরাধে জড়ালেও তাকে বড় করে অপরাধের কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়।বর্তমানে দেশের রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির কয়েক লাখ নেতাকর্মী হামলা মামলার শিকার হয়েছে। এমন কিছু নেতা রয়েছে যাদের সপ্তাহের ছয়দিনই আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হয়।দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার উপর সরকারের পূর্ণ হাত রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ একপক্ষীয় হয়ে গেছে। বিচার ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের উপর জনগণের পূর্ণ আস্থা ও ভরসা কতটুকু? সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের আগুন আর জনগণের মনের আগুন এক হয়ে গেছে। কখন যে বিস্ফোরণ ঘটে যায় তা সময়ের ব্যাপার। আর এদিকে বিএনপি পুরোপুরি রাজপথ দখল করার চেষ্টা করছে। প্রতিনিয়ত কর্মসূচিতে সরগরম করছে ঢাকার রাজপথ। বিএনপি ও তার শরিকরা নির্বাচনের বিকল্প হিসেবে আন্দোলনকে বেছে নিয়েছে।সরকার অন্য দিকে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলনে তাদের সাথে সারা বিশ্ব রয়েছে। বিএনপির এ বক্তব্য কতটুকু যৌক্তিক? আমেরিকা, যুক্তরাজ্য তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়।বিদেশিদের এসব বক্তব্যই পুঁজি করে হয়ত বিএনপি বলছে তাদের সাথে বিশ্ব রয়েছে। এদেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজের সকলকে শান্তিপূর্ণ বৈঠকের আহবান করা উচিত। দ্বাদশ নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একের পর এক জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছে সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে। বিএনপির বক্তব্য গুলো নমনীয় নয়।তারা সরকারে গেলে তো মনে হচ্ছে একই কাজ করবে। বর্তমান সরকারের সাফল্য থেকে ব্যর্থতায়ই বেশি মনে করছে বিরোধী দলগুলোর নেতারা। এ সরকারের আমলে দেশ থেকে টাকা পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু রোধ করার কোনো উপায় বের হচ্ছে না। দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের রাজনীতির সংকট নিরসনের উপায় বের না হলে জনগণের ভোগান্তির শেষ হবে না। সরকারের উচিত জনগণের কথা চিন্তা করে আইন,বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন করে দেওয়া। আর নির্বাচন কমিশনকেও দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি অর্থবহ করে তুলতে হবে। পূর্বের জাতীয় নির্বাচনগুলোর কোনো ঘাটতি থাকলে, সেই গ্লানি মুছে আগামী জাতীয় নির্বাচনটি জনগণকে পূর্ণ অধিকার বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। নির্বাচন কমিশন যদি দশম এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পথে হাঁটে তাহলে আবারও জনগণের সাথে প্রতারণা করা হবে। জনগণের কাছে আবারও নির্বাচন কমিশন জাতীয় বেইমান হিসেবে খ্যাতি পাবে। বারবার যদি ইসি তাদের ব্যর্থতার পরিচয় জনগণের সামনে তুলে ধরে তাহলে এ নির্বাচন ব্যবস্থার উপর কোনো ভাবেই জনগণ আস্থা রাখতে পারবে না।এখনো পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কোনো শক্ত অবস্থানে নেই। দুর্বল মনে হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের আহবান করেছিল নির্বাচন কমিশন। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না এটা স্পষ্ট করেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তো বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের পক্ষে না থেকে, গুরুত্ব না দিয়ে, কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ ও তার কয়েকটি শরিকদের পক্ষেই বেশি সমর্থন দিয়েছে। এ সরকার পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল চালু,এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন উন্নয়ন দেখাচ্ছে জনগণকে। জনগণ ও বিশ্বাস করেছে এ সরকার উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু এ সরকার প্রকৃতপক্ষে জনগণের সরকার নয়।কারণ, ভোটের অধিকার, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির নিয়ন্ত্রণ, জনগণের নিরাপত্তার নিশ্চিত এ সরকার করতে পারে নাই। গুম, খুন প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। কিন্তু এসব কাঙ্ক্ষিত বিচারের সুফল ত জনগণ পাচ্ছে না।গত তিন মেয়াদে সরকার ক্ষমতায় থাকাতে সরকার দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ও অহংকার, দাম্ভিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণের সাথে তাদের ও ভালো সম্পর্ক নেই। আবার, যদি বর্তমান সরকার ওই ক্ষমতায় আসে তাহলে সরকার দলের কিছু নোংরা নেতারা আরও লাগামহীন বেপরোয়া হয়ে যাবে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। কারণ, বিএনপি যদি হেরে যায়, দলটির অস্থিত্ব সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতাচ্যুত হয় তাহলে তাদের পরিস্থিতি ও সুখকর হবে না।সমঝোতার কোনো সম্ভাবনাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।প্রতিনিয়তই একে অপরের দোষারোপ করেই যাচ্ছে। সংলাপের ও কোনো লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি পুরোপুরি সরকার পতনের আন্দোলনে মাঠে নেমেছে এ ঘোষণা দিয়েছে। সংঘাত, সহিংসতা যাতে বৃদ্ধি না পায় সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই জনগণের ভাবনা মাথায় রেখে সমঝোতা ও সংলাপে বসা উচিত। সংলাপ ও সমঝোতার সম্ভাবনা দিনদিন কমে যাচ্ছে। এতে দেশ ভয়ংকর সংঘাতের পথে হাঁটছে।
বাদশাহ আবদুল্লাহ
তরুণ কলামিষ্ট ও বিশ্লেষক