জি নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রহসনের ভোট’ আখ্যা দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এডিটরিয়াল বোর্ড গত ১৬ জানুয়ারি একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত ১০ বছরের সাফল্যের প্রশংসা করা হয়। মাথা পিছু আয় ১৫০ ভাগ বৃদ্ধি, চরম দারিদ্র্য ১৯ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নেমে আসার বিষয়গুলোকে উল্লেখ করা হয়।
তবে প্রধানমন্ত্রীর সব অর্জন নির্বাচনে একতরফা জয়ের কারণে ম্লান হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের জবাব দিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
নিউইয়র্ক টাইমস গত শুক্রবার তাদের চিঠিপত্র বিভাগে ওই চিঠিটি প্রকাশ করে।
চিঠিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর যে বিষয়টি সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে সেটি ভুল। কারণ বাংলাদেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে।
নির্বাচনে গণগ্রেফতারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আগের নির্বাচনগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে নিশ্চিতভাবেই ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও এ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বলেছেন।
প্রসঙ্গত নিউইয়র্ক টাইমসের ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, নির্বাচনের আগে থেকেই স্থানীয় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিরোধী পক্ষকে হুমকি ও গ্রেফতারের সমালোচনা করে আসছিল। নির্বাচনী প্রচারের কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে যেটি ছিল- ‘বিচার বিভাগ বা নির্বাচন কমিশনের বাধা ছাড়া সমাজের প্রথিতযশা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর একটি আবহ।’
নিউইয়র্ক টাইমস গত ডিসেম্বরে দ্য টাইমসকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর এক সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দেয়, যেখানে তিনি বলেন, ‘আমি যদি খাদ্য, চাকরি, স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করতে পারি, তবে সেটিই মানবাধিকার।’
বিরোধী দল, সুশীল সমাজ, এনজিও কী বলল তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি আমার দেশকে চিনি, আমি জানি কীভাবে দেশের উন্নয়ন করতে হয়।’ এর পরই সম্পাদকীয়টিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে- যেখানে সাম্প্রতিক জরিপে শেখ হাসিনার জয়লাভের সমূহ সম্ভাবনা ছিল, সেখানে কেন এই অর্থহীন নির্বাচনী ফল।
শেখ হাসিনার সব অর্জন ম্লান হয়ে গেল তার কর্তৃত্ববাদী পদ্ধতি এবং দমনমূলক আচরণের কারণে। এখন তার নির্বাসিত বা আত্মগোপনে থাকা বিরোধীরা আরও কট্টর এবং বিদেশি সমর্থকরা আরও সতর্ক হয়ে উঠবে।
লেখাটিতে নির্বাচন নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অসন্তুষ্টির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।লেখাটির সমাপ্তি টানা হয় এই বলে, সাম্প্রতিককালে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত যে গতিপথ, তাতে এ ধরনের উপদেশ দিয়ে তাকে নড়ানো যাবে না।কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করছে এবং দরিদ্রতা হ্রাসের কারণে উৎসাহিত করছে এমন মিত্রদের মনে রাখতে হবে যে মানবাধিকার কোনো আরোপিত বেমানান সংস্কৃতি নয়, বরং এটি উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
সূত্রঃ যুগান্তর।