ভারতবর্ষে যুগশ্রেষ্ট কয়েকজন নির্যাতিত আকাবিরের ইতিহাস
সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ
ইতিহাস এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে সবার স্থান হয় না। যুগ-জমানা পাল্টে দেয়া ব্যক্তিরাই সেখানে স্থান পায়। এজন্য তাদের উপর দিয়ে বারোধীতার স্লাইকোন চলে। ধর্য্যের সাথে যারা এসব মোকাবিলা কনে যান, তারাই একদা ইতিহাস হন। ভারত বর্ষের বিগত তিনশ বছরের প্রসিদ্ধ কয়েকজন আলেম স্বগ্রোত্রীয় অনন্যা জমহুর আলরমদের দ্বারা নির্যাতিত জওয়ার কিছু যৎসামান্য ঘটনা আজ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরব। শুনাব তারা আবেগী, হুজুহী, উগ্রবাদী ও স্বার্থপর ফেতনাবাজ শ্রেনীর আলেমদের দ্বারা কিভাবে জুলুমে স্বীকার হয়েছেন। এই জুলমবাজ নামমদ্বারী দুনিয়াদ্বার আলেমশ্রেনী ও তাদের ফেৎনা সর্বকালেই ছিল। এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তাদের দিয়েই আল্লাহ তার প্রিয় বান্ধাদের সবর আর ইস্কেকামাতের কটিন পরিক্ষা নিয়ে থাকেন।
আমরা ইতিহাসের পাতায় সে সব ইতিহাসে কেবল পড়েছি, কিন্তু আমরা এমন দু’একজনকে এজামানায়ও এমন জুলুমে স্বীকার হতে দেখেছি। এর রাজসাক্ষি হচ্ছে আমাদের প্রজন্ম। তাঁদের জীবনী এভাবে পাঠ করবে আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম। শুনাতে পারব পরবর্তি প্রজন্মকে এযুগের এমন দু’কজন মজলুম মনীষার কথা।
জামানার মহা-নায়করা এমনি হন। স্রোতের উল্টো, আবেগ-হুজুগী আর চিন্তার সংকীর্ণতার অনেক উর্ধ্বে উঠে তারা কাজ করেন। তাদের দূরদর্শি চিন্তা চেতনা স্পর্শ করার মতো যোগ্যতা থাকে না সমকালীন অনেকেরই। ফলে তাদের বিরোধীতা করাকেই অকাজের কাজিরা কাজ মনে করেন। তাদের আঘাত করাকে অনেক বুঝমান ব্যক্তিও এবাদত মনে করেন। বিরোধীতাকে সওয়াব ভাবেন। তাদের অনুসারীদের গলাচেপে ধরতে, কিংবা গাড় ধাক্কা দিয়ে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দেয়াকে পূন্যের মনে করেন।
আর তারা কোন প্রকার সমালোচনার পরোয়া না করে কাজের কাজ করে যান আপন গতিতে। গীবত, শেকায়ত, থেকে তারা মুক্ত থাকেন। এই মরুঝড় আর তুফানের ভেতর দিয়েও একদল মুখলেস আল্লাহর বন্দা এসব মজলুম আকাবিরদের সাথে থেকে তাদের অনুসরণ করে থাকে এবং ইতিহাসে স্থান করে নেন। ঠিকমত ইতিহাসটি পরবর্তি প্রজন্মের জন্য লিখে রাখেন কেউ কেউ। যুগে যুগে এমনিই হয়েছে, আর এমনিই হবে….______________________শাহ ওলী উল্লাহ মোহাদ্দেসে দেহলভী রহ
উপমহাদেশে সর্ব প্রথম ফার্সি ভাষায় কুরআনের তাফসীর ও অনুবাদ করেন। কোরআনকে ফার্সি করে ফেলা! কত বড় অপরাধ! এটা মেনে নিতে পারলেন না সমকালীন কিছু আবেগি মানুষ। হক্কানি আলেমদের বড় একটি অংশ। তৎকালীন উলামায়ে কেরাম এর জমহুর জামাত এই বিষয়ে একমত হয়ে গেলেন, যে শাহ সাহেব মুহার্রিফে কুরাআন। যুগের সবচেয়ে বড় নকীব ও বিদগ্ধ এই মুজাদদ্দেদ আলেমের উপর বার বার সশস্ত্র আক্রমন করা হল। অবশেষে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি কেট ফেলা হল। তাকে যারা হক মনে করে আকড়ে ছিলেন তাদেরকেও গোমরা মনে করে আঘাত করা হত। এমনকি আল্লাহর ঘর মসজিদের ভিতর তাঁর অনুসারীদের নামাজ পড়তে দেয়া হত না।
তার কোন অনুসারীকেই তখন কোন দ্বীনী কাজ করতে দেয়া হত না। কিন্ত দেহলভী রহ. যুক্তি ছিলো ভবিষ্যত প্রজন্মকে কুরআন শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করন। পরবর্তীতে তার চিন্তা চেতনা ও দর্শনই সহি বলে বিবেচিত হল। তিনি পরবর্তিতে ভারতবর্ষের সবচেয়ে অবিসংবাদিত মুসলিম নেতা।পরে তার তাফসিরকে গোটা উপমহাদেশে কোরআন চর্চার মাইল ফলক বলে ফলো করা হল।
আজ শত বছর পরে এসে ইতিহাস বলে তিনি হকের উপর প্রতিষ্টিত কালজয়ী এক মহা মনীষা হিসাবেই অমর হয়ে আছেন। আর বিরোধীরা আজ কোথায়? ইতিহাসে কি তাদের কোন অস্তিত্ব আছে?
উপমহাদেশের সকল উলামায়ে কেরামের যাবতীয় দ্বীনী, ফিকহি সিলসিলা, হাদীসের সনদ, তাযকিয়ার শাযরাহ গিয়ে একত্রিত হয়েছে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দেসে দেহলভীর সাথে। তাকে বাদ দিয়ে উপমহাদেশে ইমলামের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। আর ইতিহাস পাঠে এখন এসে অবাক হতে হয়, এই মহান যুগ সংস্কারক আলেমেদ্বীনের উপরেও তৎকালিন উলামায়ে কেরামদের একটি বড় অংশ ৩০বছরের অধিক সময় কুফরি ফতোয়া দিয়ে রেখেছিলেন দীর্ঘদিন। এমনকি তিনি কাফের হিসাবে তাকে হত্যা করার জন্য বারবার সবোর্চ্চ চেষ্টা করেছেন এই ফতোয়াবাজ আলেম শ্রনী। (বিস্তারিত দেখুন, হায়াতে ওয়ালী পৃষ্টা নং ৩২১)
শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী ছিলেন, ঐব্যাক্তি -যিনি দীর্ঘ এগার বছর কাল সাধনার পরে কুরআন শরিফের প্রথম পুনাঙ্গ অনুবাদ করেছিলেন উপমহাদেশে। তখন সর্বত্র ফার্সি ভাষার প্রচলন ছিল। ফারসি ভাষায় তিনি কুরআনের তরজমা “ফতহুর রাহমান” প্রকাশের পর তৎকালিন উলামায়ে কেরাম না বুঝেই আরবী কুরআনকে ফার্সি করার অপরাধে তার উপর ভয়ংকর ‘কুফরি’ ফতোয়া আরোপ করেন। তার বিরোদ্ধে মিটিং মিছিল আর অবরোধ ও হামলা সহ এমন কোন নেক্কারজনক ঘটনা নেই যা, স্বগোত্রের আলেমদের দ্বারা তার উপর হয়নি। আমিরুর_রওয়াত গ্রন্থে আছে, এমনকি এই ফতোয়ার কারনে তাকে তাঁর এলাকা থেকে অবাঞ্ছিত ঘোশনা করে বের করে দেয়া হয়েছিল। (বিস্তারিত দেখুন, শাহ ওয়ালী উল্লাহ আউর উনকি সিয়াসি তাহরিক, মাওলানা উবায়দুল্লাহ
________________________
হুজ্জাতুল ইসলাম ক্বাসিম নানুতবী
দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ক্বাসিম নানুতবী রহ.। একবার লাখনৌর ‘পুরকাজী’ নামক অঞ্চলে ছিলেন।তখন সেখানে শিয়াদের মহররমের আনুষ্ঠানিকতা চলছে। শিয়ারা কি এবং তাদের হারাম কাণ্ডকারখানা সম্পর্কে সবাই অবগত আছেন। তো তাদের একটি প্রতিনিধি দল নানুতবী রহ. এর কাছে এসে দাওয়াত দিলো তাদের তাযিয়া মিছিল ও মাতম অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। তিনি দাওয়াত কবুল করলেন। সেখানে গিয়ে বক্তব্যও রাখলেন। তাঁর সেই বক্তব্য পরবর্তীতে অনেকের হেদায়াতের পথ খুলে দিলেও, তখন কিন্তু পুরো ভারতবর্ষে জুড়ে তার সমালোচনা ও নিন্দার তুলকালাম ঘটে গেল।মানাযির আহসান গিলানী রহ. এর ভাষায় খালবালি মাচ গায়ি। তিনি শিয়া হয়ে গেছেন বলে মিছিল মিটিং পর্যন্ত হয়ে গেল। তাকে সমালোচনায় ক্ষত-বিক্ষত করা হল। তবে নানুতবী রহ. তা থোড়াই পাত্তা দিয়েছেন, কিন্তু শেষে নিজের মানুষদের প্রশান্তির জন্য সেই দৃঢ় উত্তর শুনিয়ে দেন “শক্তিসম্পন্ন সাধক বিষ খেয়েও হজম করতে পারে বিষের কোন প্রতিক্রিয়া তাঁর দেহে প্রকাশ পায় না। যার পাকস্থলী দুর্বল সে তো সামান্য তৈল ব্যঞ্জনেও অসুস্থ হয়ে